একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একমাস পর মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেন, বুধবার ভুয়াভোটের সংসদ বসছে। এই সংসদ গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার প্রেতাত্মা। এই সংসদ গণবিরোধী, এই সংসদ নিরস্ত্র ভোটারদের ওপর অবৈধ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শণকারী গণশত্রুদের আড্ডাঘর। এই সংসদ ইতিহাসের ম্যান্ডেটবিহীন ক্ষমতালোভীদের সম্মিলন হিসেবে বিবেচিত হবে সর্বত্র।
সংসদে আজকের অনুষ্ঠিতব্য প্রথম অধিবেশনকে ‘ভুয়া’ অভিহিত করে এর প্রতিবাদে ঢাকায় এক ঘন্টার মানববন্ধন কর্মসূচি ও ৮ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দিতে জনসভা করবে বিএনপি। গতকাল বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা নূরী আরা সাফা, সুলতানা আহম্মেদ, আমিনুল ইসলাম, শাহানা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মহা তামাশার নির্বাচন। চরম মিথ্যাচার, অনুশোচনাহীনতা ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্লজ্জভাবে ম্যানুফ্যাকচার্ড ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে নিজেরা আত্মপ্রসাদ লাভ করলেও জনগণকে বোকা বানানো যায়নি। মহাভোট ডাকাতির মহা সমারোহ জনগণ প্রকাশ্যে দেখেছে। ভুয়া ভোটের মিথ্যা জয়ের অহঙ্কারে ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ গরিব মানুষের বাড়িঘর, দোকান, বাজার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ঘরছাড়া করা হয়েছে। নির্বাচনের নামে এক অসুস্থ পরিবেশ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্র-সমাজের সর্বত্র। নির্বাচন পূর্বাপর ভুয়াভোটের সরকারের জয়োল্লাসের প্রকোপে চারিদিকে শুধু হিংসার ছবি। প্রহসনের নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন, আইন-আদালত, পুলিশ-প্রশাসন সবই ভুয়াভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গুলি হেলনে উঠবস করতো। ধুর্তামি, শঠতা ও নির্মম দমন-পীড়ণের মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠ কব্জায় নিয়ে তারা একতরফা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। সারাদেশে তারা ভয়-ভীতির শিহরণ সৃষ্টি করে। ভোটের মাঠ শুন্য করতে সরকারি প্রশাসন মহাতৎপরতায় লিপ্ত ছিল। মূলত: রক্তাক্ত মূর্তি নিয়েই তারা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার আত্মসাৎ করে।
তিনি বলেন, এই কালিমালিপ্ত ভুয়াভোটের সংসদের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি ‘গণতন্তের মা’ ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্যায়ভাবে কারান্তরীণ নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বেলা ২টায় সোহরাওয়াদী উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় যোগাযোগ ও চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।
রিজভী জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পারভেজ আহমেদ মিথ্যা ও বানেয়াট মামলায় জামিন লাভের পরও তিনবার তাকে জেলগেট থেকে গ্রেফতার ও তার নামে নতুন রাজনৈতিক মামলা দেয়া হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হলো- পরিবারের সদস্যদেরকে তার সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। অসত্য ও ভুয়া মামলায় জামিন লাভের পরও পারভেজ আহমেদকে বারবার কারাফটক থেকে গ্রেফতার ও নতুন নতুন মামলা দায়েরের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
সূত্র: নয়াদিগন্ত