অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলানগরের আংশিক এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৩ আসন। ২০০৮ সাল থেকে এখানে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জাহাঙ্গীর কবীর নানক একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। দলটির বিভিন্ন সংকটেও অন্যতম কাণ্ডারীর ভূমিকায় ছিলেন এই বিতর্কিত ও সমালোচিত নেতা। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নানক মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে তেমন কোনো সন্দেহ ছিলো না।
কিন্তু বেঁকে বসে সেনাসদর। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যাপারে আপত্তি করেন তারা। ফলে ঢাকা-১৩ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নানকের পরিবর্তে দেখা গেলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অপর নেতা সাদেক খানকে। অথচ, তার মনোনয়ন নিয়ে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না। ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসার হতাহতের ঘটনায় সন্দেহজনক ও বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর আপত্তি ছিল তখন থেকেই। আর বাদ পড়ার এই সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে নানক নিজেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও কম আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থী সাদেক খানের গ্রুপের সাথে সংঘর্ষ ও খুনোখুনিতেও এগিয়ে ছিলেন তিনি। এমনকি সাদেক খানের সমর্থক দুই কিশোরকে প্রকাশ্য রাজপথে হত্যা করেও নিজের অবস্থান পাকা করতে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য ওবায়দুল কাদেরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও পথের কাঁটা ছিলেন নানক। কাদের চাননি ভবিষ্যতে আর নানক তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াক। এজন্য নানককে আউট করার জন্য তারও ভূমিকা ছিল। এছাড়া সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে যাওয়ার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে যে হামলা হয় তার জন্যও নানককে অভিযুক্ত করা হয়। নানকের ক্যাডার বাহিনীই বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নানককে মাইনাস করার জন্য এই ঘটনাটিও ভূমিকা রেখেছে।
ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের উত্থান। তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান নানক। এর কয়েকদিন পরেই ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে যায় ইতিহাসের নির্মমতম সেনা অফিসার হত্যার ঘটনা। ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জনের হত্যাকান্ডের এ নির্মম ঘটনাতে বিতর্কিত ভূমিকায় দেখা গেছে আওয়ামী লীগের এ প্রভাবশালী নেতাকে। নানকসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর আপত্তি থাকায় নানকের বাদ পড়ার গুঞ্জন বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই গুঞ্জনই সত্যি হল।
পিলখানা হত্যাকান্ডের পর দু’টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। আরেকটি তদন্ত কমিটি সরকার গঠন করেছিল। দু’টি তদন্ত কমিটি পৃথক রিপোর্ট দিয়েছে। তবে সেই রিপোর্ট দু’টি সরকার প্রকাশ করেনি। কার স্বার্থে, কেন প্রকাশ করেনি তা নিয়ে জনমনে শুরু থেকেই প্রশ্ন রয়েছে।
উল্লেখ্য, মেজর জেনারেল শাকিল আহমদসহ বিভিন্ন পদবীর মোট ৫৭ জন সেনা অফিসারকে সেদিন পিলখানায় খুন করা হয়। শুধু খুন নয়, তাদের লাশকে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছিল। কারো কারো লাশ ময়লার ড্রেনে নিক্ষেপ করা হয়। একাধিক লাশ আগুনে পুড়ে ফেলা হয়। কিছু লাশ মাটি চাপা দেয়া হয় পিলখানার ভেতরে। শেষ পর্যন্ত দু’টি লাশের সন্ধান-ই পাওয়া যায়নি। পিলখানায় যখন নির্মম হত্যাকান্ড চলছিল তখন সেনাবাহিনী বারবার সেনা অফিসারদের উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই করতে দেয়া হয়নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আযম আলোচনার কথা বলে বারবার সময় ক্ষেপন করে। এমনকি এক পর্যায়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে খুনীদের পালিয়ে যাওয়ার পথ তৈরী করে দেয়।