অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল নির্বাচন কমিশন। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা নির্বাচন সম্পন্ন করবে। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ সুশীল সমাজের লোকজনের পক্ষ থেকে নির্বাচন ১ মাস পেছানোর দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার সাফ কথা, ৩০ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
বিগত দুই বছর ধরেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারি টাকা খরচ করে বিভিন্ন জেলায় জনসভা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বছর ধরে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে ওয়াদা নিচ্ছেন। বলা যায়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
অপরদিকে, বিএনপি জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের দিন কাটছে আদালতে দৌড়ে। আর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে বাকী সময়টা থাকতে হয় আত্মগোপনে। জনগণের কাছে ভোট চাওয়াতো দূরের কথা পুলিশের হয়রানির ভয়ে তারা নিজেদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গেই দেখা করতে পারে না। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে তাদেরকে অপ্রস্তুত রেখেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে। ক্ষমতাসীনদের সেই টার্গেট পূরণ করছে এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ও ইসি সচিব হেলালউদ্দীন। এজন্য নির্বাচনের মাঠ বিএনপি জোটের অনুকূলে আসার আগেই ইসি নির্বাচনটা সম্পন্ন করতে চাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, জনগণের ভোটে যে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ভাল করেই জানেন।জনগণ তাদের পছন্দের ভোটারদেরকে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আগামী নির্বাচনে নৌকার চরম ভরাডুবি হবে। সেজন্য বিগত নির্বাচনগুলোর মতো কেন্দ্রদখল, ব্যালট ছিনতাই এবং জালভোটই তাদের একমাত্র ভরসা। বিগত নির্বাচনগুলোতে এসব করতে গিয়ে অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশ-বিদেশের মানুষ এসব চিত্র দেখেছে। তবে, এবার আর মানুষকে কেন্দ্রদখল, ব্যালট ছিনতাই ও জালভোটের দৃশ্য মানুষকে দেখার সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ।
গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমের জন্য ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো, কেন্দ্র থেকে কোনো টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না।বাকী শর্তগুলোও বিপদজনক।ইসির এই নির্দেশনার কারণে এবার ভোট ডাকাতির কোনো দৃশ্য জনগণ আর দেখতে পারবে না। জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনার আলোকেই নির্বাচন কমিশন এসব করতেছে।
তারপর, বুধবার নয়াপল্টনে যে ঘটনা ঘটেছে এতেও ইসির ভুমিকা নিয়ে মানুষের মনে নানা সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।ক্ষমতাসীন দলের ধানমন্ডির অফিস এলাকায় নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে ঐ এলাকায় জনদুর্ভোগ নেমে এসেছিল।তারা নিজেরা মারামরিও করেছে। দুইজন মারাও গেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এনিয়ে কোনো কথা বলেনি।অথচ নয়াপল্টনে বিএনপির অফিসের সামনে নেতাকর্মীরা ভিড় করায় ইসির এটা সহ্য হলো না।পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে উৎসবমুখর একটা পরিবেশকে নষ্ট করে দিয়েছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, সরকারের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন এটা করেছে। এছাড়া সারাদেশে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার হয়রানিতো আছেই।
বিশিষ্টজনেরাও মনে করছেন, ক্ষমতাসীনদের করে দেয়া ছকেই হাটছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ও ইসি সচিব হেলালউদ্দীন দুইজনই ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসবে এটা কল্পনা করাও ভুল।ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবেই নুরুল হুদা ও হেলালউদ্দিনকে ইসির গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে বসিয়েছে। তাদের মতে, নির্দলীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।