শরীফ ইউ আহমেদ
স্বীয় পুত্রের ‘অর্বাচীন তলোয়ারের’ আঘাতে খুন হলেন শ্রদ্ধেয় বি.চৌধুরী। দেশ সেরা ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও, নিজেই ’হাঁতুড়ী ডাক্তার’ পুত্রের ভুল ঔষধ খেয়ে আজ চিরতরে রাজনীতির জীবন থেকে লজ্জাজনক ও করুন ভাবে বিদায় নিলেন। আর ইতিহাসের পাতায় আজ থেকে লিখিত হবে, স্বীয় পুত্রের হাতেই শেষটায় ‘রাজনৈতিক খুন’ হলেন জাতীয়তাবাদী আদর্শের সবার প্রিয় ‘বি.চৌধুরী স্যার’।
অতীত ইতিহাস বলে, জ্ঞানীরা বাহিরে শতভাগ সফল হলেও, কখনও কখনও নিজ ঘরেই তাঁরা শতভাগ পরাজিত হয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে সেই অতীত সত্যই আবার প্রমানিত হলো, শ্রদ্ধেয় বি.চৌধুরীর রাজনীতির জীবনের করুন বিদায়ের মধ্য দিয়ে।
জীবনের সিংহভাগ সময়, যার অতিবাহিত হয়েছে ‘সফলতার তরীতে’, আজ সেই সফল মানুষটিই ‘পুত্রের অর্বাচীন তরী’র যাত্রী হয়ে জীবন মরণের সন্ধিক্ষনে এসে উপনীত হয়েছেন।
আমি জানি, আজ যে কেহই শ্রদ্ধেয় বি.চৌধুরীর অতীতে ফেলা আসা সব সাফল্যকে ম্লান করে দিয়ে, তাঁর বর্তমান সময়ের পরাজিত জীবনকেই বেশী মনে রাখবে। ধ্বংস হয়ে গেল একজন সফল মানুষের অর্জিত সব অহংকার। আর সেই ধ্বংসের মহানায়ক হলেন তাঁর স্বীয় পুত্র ‘স্টুপিড মাহী বি.চৌধুরী’।
অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছা বলে এবং নিজের পছন্দসই মানুষ হিসেবে, অত্যান্ত সম্মান করে, ১৯৭৯ সালে জনাব বি.চৌধুরীকে তাঁর প্রিয় সংগঠন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বানিয়ে ছিলেন। মহাসচিব হবার আগে শহীদ জিয়া জনাব বি.চৌধুরীকে দেশের উপ প্রধানমন্ত্রীর মত গুরুত্বপূর্ন ও সম্মানজনক পদও দিয়েছিলেন।
অথচ সেই সময় জনাব বি.চৌধুরী রাজনীতি কিংবা সরকার পরিচালনায় ততটা পরিপক্ক ছিলেন না। শহীদ জিয়া জনাব বি.চৌধুরীকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘মি. চৌধুরী, আমি আপনার পাশে আছি, আপনি চালিয়ে যান’। জনাব চৌধুরী সফলতার তরী চালিয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু জীবনের শেষ সময় এসে পুত্রের ‘অর্বাচীন তরী’র যাত্রী হয়ে চিরতরে ডুবে গেলেন।
শুধু শহীদ জিয়াই নন, বরং শহীদ জিয়ার সহধমির্নী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও জনাব বি.চৌধুরীকে অত্যান্ত সম্মান করতেন। পার্টির সিনিয়র নেতার সম্মান থেকে শুরু করে, দলের অনেক পরামর্শ দেশনেত্রী জনাব বি.চৌধুরীকে প্রাধান্য দিতেন। আশি ও নব্বই দশকে বিএনপি’র মূল শক্তিশালী সংগঠন ছাত্রদলের যে কোন অনুষ্ঠানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনাব বি.চৌধুরীকে প্রধান অতিথি হতে বেশী প্রাধান্য দিতেন।
শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে সরকারী দলের শক্তিশালী ক্ষমতাবান নেতা হিসেবে, তাঁকে সংসদ উপনেতা হবার সম্মানও দিয়ে ছিলেন। তারপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় দেশের সর্বোচ্চ পদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদটিও তাঁকে অর্পন করেছিলেন। এত সব প্রাপ্তির পরও, জনাব বি.চৌধুরী শেষটায় স্বীয় পুত্র ‘অর্বাচীন তরী’তে উঠে জীবনের শেষ ক্ষনে এসে, লজ্জার সাগরে ডুবে, আজ রাজনীতিতে চিরতরে বিদায় নিয়ে মৃত হয়ে গেলেন।
দেশের প্রায় সকল জনগন যখন ঐক্যের পথে, তখন তাঁর পুত্র ছিল ঐক্যের বিনষ্ট করার এক ‘অপকৌশলী ইঁদুর’। ঐক্যের জাল কাটতে যেয়ে, শেষটায় জনাব মাহী নিজ বাবার সফলতার জালই কেটে ফেললেন। আর যার কারনে আজ জনাব বি.চৌধুরীকে লজ্জা জনক ভাবে জাতীয় ঐক্য থেকে বাহির করে দেওয়া হল।
আশা করি ভবিষ্যতে সকল সফল পিতা-মাতাই জনাব বি.চৌধরীর এই করুন দৃস্টান্তের কথা স্মারন করে কাজ করবেন। নতুবা যে কোন সফল পিতা-মাতাই তাঁর স্বীয় পুত্র বা কন্যার কারনে ধ্বংসের পথে পা বাড়াবেন নিশ্চিত।
মহান আল্লাহ, আপনার করুনা প্রাপ্ত জ্ঞানীদের প্রকৃত জ্ঞানের পথে ও সঠিক পথে, পথ চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জেনারেল সেক্রেটারি- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি লইয়ার্স এসোসিয়েশন