অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকার কথিত দুর্নীতি মামলাটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দুই বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধীজোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার নামক চার দেয়ালের ভেতর বন্দি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কয়েকটি মামলা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা তার নিজের নামে করা সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে করা মামলাগুলো সচল করেন। বিশেষ আদালতে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষ হয় গত ২৫ জানুয়ারি। সর্বশেষ ৮ ফ্রেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে তার সবই ভেস্তে যাচ্ছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথিত এই মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আদালতের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়েছেন।
প্রথমত: এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এতে তার সুনাম নষ্ট হবে। জনপ্রিয়তাও কমবে। কিন্তু দেখা গেছে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর ঘটনা সম্পূর্ণ হিতে বিপরীত হচ্ছে। দুই বারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য ৫ বছরের সাজার বিষয়টি মানুষকে বিস্মিত করেছে। টাকার অংক যদি ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা হতো তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতো। আর টাকাটাও রাষ্ট্রের না। এটা তার স্বামীর নামে করা একটি এতিম খানার। একজন প্রধানমন্ত্রীর যেখানে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ থাকে সেখানে এতিম খানার ফান্ডের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা মানুষের কাছে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।
বরং মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, শেখ হাসিনার নামে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মামলা ছিল। ক্ষমতায় এসে সবগুলো প্রত্যাহার করেছে। আর শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনামলে শেয়ারবাজার ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে লুটপাটকারীদের নাম প্রকাশের পরও তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব নিয়ে এখন বিশিষ্টজনেরাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসব নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটকারীদের আশ্রয় দিয়ে মাত্র ২ কোটি টাকার কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঠিয়ে শেখ হাসিনা এখন কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
আর দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়ার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করা হলেও ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে। খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভালবাসা ও সহমর্মিতা আগের চেয়ে আরও বহুগুণে বেড়েছে। মনে হচ্ছে মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে এখন বন্দি খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা আরও বেশি।
দ্বিতীয়ত: সরকারের টার্গেট ছিল খালেদা জিয়াকে জেলে ভরে বিএনপির মধ্যে ফাটল ধরানো। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। কিন্তু এখানেও সরকারের টার্গেট মিস হয়ে গেছে। কারণ, খালেদা জিয়ার এ রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক সুসংহত হয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরে আগে যে কোন্দল ছিল এখন সেটাও দূর হয়ে গেছে। কারণ, জেলে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া হুশিয়ার করে গেছেন, এবার ভুল করলে আর ক্ষমা করা হবে না। তাই খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা এখন সব ভেদাভেদ ভুলে এককাতারে এসে দাড়িয়েছেন।
তৃতীয়ত: সরকারের টার্গেট ছিল খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো বড় ধরণের আন্দোলনের ডাক দেবে। বিএনপির এ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সরকার এজেন্সির লোক দিয়ে যানবাহলে আগুন দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করবে। আর দোষ চাপাবে বিএনপির ওপর। সরকার পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাদেরকে গণহারে গ্রেফতার করবে। কিন্তু দেখা গেছে, সরকারের এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড হয়নি। বরং পুলিশ উল্টো তাদের মিছিলে বিনা উস্কানিতে হামলা-লাঠিচার্জ ও গুলি করেছে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সরকার যে টার্গেট নিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে ভরেছে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং সরকার আরও উল্টো চাপে পড়েছে। আর সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে হেনস্তা করছে তার পরিণতির জন্যও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপেক্ষা করতে হবে।