কামরুল আহসান নোমানী
কোন দাবী আদায়ে রাজপথে নামবেন? কাঁদানে গ্যাস, মরিচের গুড়ো, জলকামান নিয়ে পুলিশ আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। বন্দুকের তপ্ত বুলেট আপনাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবে। জনির বুকে মাত্র সতেরটা গুলি করা হয়েছিল। ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ছেলেটার বুক।
ক্লোজ রেঞ্জ থেকে গুলি করা হবে চোখ বরাবর।
সিদ্দিকুর বেঁচে আছে কিন্তু সারাজীবনের জন্যে তার পৃথিবী হয়ে গেছে অন্ধকার!
বিরোধীমতের মানুষগুলোকে তো সর্বদাই আতংকে থাকতে হয়। তারা নড়লেও বিপদ, না নড়লেও বিপদ। মামলা-হামলা লেগেই থাকে। বিএনপির মহাসচিবের নামেই আটাত্তরটা মামলা! খালেদা জিয়াকে এইবয়সেও প্রতিসপ্তাহে আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্যে আদালতে যেতে হয়। বিরোধীমতের প্রতিটা মানুষের মাথার উপরে অদৃশ্য সুতোয় ঝুলতে থাকে গুম হওয়ার আতংক। কখন কার দরজায় কালো পোশাকধারী বাহিনী হাজির হয়ে যাবে কেউ জানেনা।
সরকার বিরোধী না হলেই যে আপনার বিপদ নেই এমন না। আছে। টিএনও তারিক সালমানের কথাটাই ভাবুন না। কী সৃজনশীল উপায়েই না ভদ্রলোক চেটেছিলেন, কিন্তু লাভ হল কই? তার চেয়েও বড় চাটাবাজের কাছে ধরা খেয়ে গেলেন। হ্যাঁ শেষপর্যন্ত টিএনও ভদ্রলোক ছাড়া পেয়েছেন, যিনি মামলা করেছেন তিনি দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। কিন্তু এতে তো আর তারিক সালমানের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে ধরে নিয়ে যাবার অপমান মুছে যাবেনা। তারিক সালমান বেঁচে গেছেন সরকার এডমিন ক্যাডারদের ঘাঁটাতে চায়না স্রেফ সে কারণে। আওয়ামীলীগ যে উপায়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছে তাতে নির্বাচনে তারিক সালমানদের না হলে চলবেনা। একজন তারিক সালমানের জন্যে তাই শখানেক সাজুদের বলি দেওয়া যায়। আওয়ামীলীগ এই ইক্যুয়েশন বুঝে বলেই আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ এই ইক্যুয়েশন বুঝে বলেই একটা অনৈতিক সরকার নিয়েও দিব্যি চারটা বছর কাটিয়ে দিতে পেরেছে।
একটু বেশী সাহস দেখাতে গেলে আপনি হয়ে যাবেন নুরু ভাই। বউ আর বাচ্চাদের মাঝখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মানুষটাকে। পরেরদিন সকালে নদীর তীরে মিলেছিল লাশ। পেছন মুড়ি করে হাত বাঁধা, শার্ট দিয়ে চোখ প্যাঁচানো। শার্টটা ছিল নুরু ভাইর।
আপনি বুদ্ধিজীবিমহলের কেউ হলে হয়ে যাবেন ফরহাদ মজহার। পুরো ঘটনাটাকেই কেমন নাটক বানিয়ে দিল সরকার! তবুও ফরহাদ মজহার সাহেবের ভাগ্য ভাল। বেঁচে ফিরেছেন। হয়ে যেতে পারতেন ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলীর সন্তানেরা বাবার কবর জেয়ারত করার সুযোগটুকুও পাননাই।
এই সরকার আপনার মুক্তভাবে কথা বলার সূযোগ রাখেনি। বাক স্বাধীনতা? হে হে। এইটা আবার কি জিনিস? ৫৭ ধারায় রুদ্ধ আমার আপনার কথা বলার অধিকার। আওয়ামীলীগ আপনার জন্যে প্রতিবাদের কোন জায়গা রাখেনি।
আয়রনি হচ্ছে, আওয়ামীলীগ আসলে তাদের নিজেদের জন্যেও কোন জায়গা রাখেনি।
(Kamrul Ahsan Nomani এর ফেসবুক থেকে)
Discussion about this post