অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের মত একদলের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে ভারত। ভারতের বহুদিনের ঐতিহ্য ছিল, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু সেই ঐতিহ্য ম্লান হতে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় জনতা পার্টি [বিজেপি] একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে দলীয়করণ করছে। অনেকটা বাংলাদেশের মতো। এর ফলে বেশ চাপে পড়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
এই কংগ্রেসই ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করার কাজ করেছিল। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে সেনা সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০৮ সালে পাতানো নির্বাচন করে আওয়ামীলীগকে বিজয়ী করেছিল। বিনিময়ে সেনা সরকারের সকল অপকর্মকে দায়মুক্তি দিয়েছে। ২০১৪ সালের একদলীয় নির্বাচন বাস্তবায়নে ভারতের তৎকালীন সরকারি দল কংগ্রেস নগ্নভাবে ভূমিকা রেখেছিল। আজ সেই কংগ্রেসই গণতন্ত্রহীনতার কবলে পড়েছে।
ভারতে পার্লামেন্টের দুই কক্ষ থেকে বিরোধী এমপি বরখাস্তের ধারা মঙ্গলবারও অব্যাহত থেকেছে। গত সপ্তাহে লোকসভায় বরখাস্ত হয়েছিলেন ১৪ জন বিরোধী এমপি। সোমবার নিমকক্ষ লোকসভা ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা মিলিয়ে সংখ্যাটা রেকর্ড ৭৮ জনে দাঁড়ায়।
মঙ্গলবার বরখাস্ত হয়েছেন আরও ৪৯ এমপি। ফলে তিন দফায় সব মিলিয়ে ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে ১৪১ বিরোধী এমপি সাময়িকভাবে বহিষ্কার হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৫ জন এমপি লোকসভার আর ৪৬ জন রাজ্যসভার।
গণহারে এমন বরখাস্তের ঘটনায় চটেছেন বিরোধীরা। সরকার ‘গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ করছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন। গণহারে এমপি বরখাস্তের ঘটনাকে বিরোধী নেতারা বলছেন, ‘গণতন্ত্রের সাসপেনশন’।
মঙ্গলবার লোকসভা থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর কংগ্রেস এমপি শশী থারুর বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে, আমাদেরকে ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রের মৃতু্সংবাদ লিখতে হচ্ছে।’ বিরোধীরা বলছে, সরকার সংসদকে এভাবে বিরোধীমুক্ত করে তুলতে চাইছে, যাতে বিতর্কিত সব বিল বিনা বাধায় কিংবা বিনা আলোচনায় পাস করানো যায়। ১৪১ জন বিরোধী এমপি বরখাস্ত হওয়ার পর পার্লামেন্ট প্রায় বিরোধীশূন্য হয়ে গেছে। শুক্রবার পর্যন্ত শীতকালীন অধিবেশন চলার কথা।
আপাত পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, অধিবেশনের বাকি যে তিনদিন আছে তাতে রাজ্যসভায় শাসকদলকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করার জন্য থাকছেন ১০০ জনেরও কম বিরোধী সাংসদ। আর লোকসভায় থাকছেন প্রায় ১০০ জন বিরোধী সাংসদ।
বিবিসি জানায়, বরখাস্ত যারা হয়েছেন, তারা বেশিরভাগই ভারতের বিরোধীদলগুলোর জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর এমপি; আগামী বছরের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) টেক্কা দিতে যে জোট গঠিত হয়েছিল। ওদিকে, শাসক শিবিরের কোনও এমপিই এ অধিবেশনে বরখাস্ত হননি।
চলতি অধিবেশনের মতো আর কোনও অধিবেশনেই কখনও এত বেশি বিরোধী এমপিকে একসঙ্গে বরখাস্ত করা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, মঙ্গলবার কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে গেছে পার্লামেন্ট। গত ১৩ ডিসেম্বর লোকসভায় আগন্তুকের অনুপ্রবেশে নিরাপত্তা ভঙ্গের ঘটনা নিয়ে হট্টগোল করার জেরে এবার যা ঘটল তা নজিরবিহীন। সংসদে অসভ্য আচরণ, সংসদের সম্মান নষ্ট এবং স্পিকার (লোকসভা) ও চেয়ারম্যান (রাজ্যসভা)-কে অবমাননার অভিযোগে এই শতাধিক বিরোধী এমপি বরখাস্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
লোকসভার নিরাপত্তা ভঙ্গ করে দুই আগন্তুকের দর্শক গ্যালারি থেকে কক্ষে ঢুকে পড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। তাদের সঙ্গে ছিল রংবোমা। হলুদ রঙের ধোঁয়া তারা সভাকক্ষের চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। দু’জনকেই ধরে ফেলার পর তুলে দেওয়ার হয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে। পার্লামেন্টের বাইরে থেকে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ জন এ ঘটনায় জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লোকসভার কক্ষে রংবোমা নিয়ে কীভাবে আগন্তুকদের অনুপ্রবেশ ঘটল সে প্রশ্নে তোলপাড় শুরু হয়। নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন বিরোধী এমপিরা।
গত বৃহস্পতিবার ওই ঘটনা নিয়েই আলোচনায় উত্তপ্ত হয় পার্লামেন্ট অধিবেশন। দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। ২০০১ সালে পার্লামেন্টে হামলার বর্ষপূর্তির দিন ১৩ ডিসেম্বরেই ওই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটায় এ বিষয়ে দুই কক্ষেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করে আসছেন বিরোধীরা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত আজ পর্যন্ত সংসদের কোনও কক্ষে ঘটনাটি নিয়ে কোনও বিবৃতি দেননি। বিরোধীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তায় ফাটলের ঘটনার দায় গ্রহণের দাবি জানালেও লোকসভার স্পিকার কিংবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান কেউই তাতে আমল দিচ্ছেন না।
বিরোধীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন এই কারণে যে, সংসদ অধিবেশন চলার পরও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাটি নিয়ে সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন, অথচ পার্লামেন্টে কিছু বলছেন না। এর মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সংসদে জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমপিদের অধিকারও হরণ করছেন।
Discussion about this post