হামলা, সংঘর্ষ, মামলাও ১৪৪ ধরায় চাপের মুখে পড়েছে বিএনপি। আর এজন্য বিএনপি শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছে। জবাবে আওয়ামী লীগ বলছে শোকের মাস আগস্টে উসকানিমূলক কথা ও কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
এখন বলতে গেলে প্রতিদিনই বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি এবং বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন। হচ্ছে সংঘর্ষ। যত জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রায় সবখানেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। আবার বিএনপি যেখানে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় প্রায় সবখানেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠন পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আর প্রশাসন জারি করে ১৪৪ ধারা। তবে হিসাব বলছে এই পরিস্থিতি প্রধানত ঢাকার বাইরে।
বুধবারও দেশের কয়েকটি এলাকায় হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লা, নেত্রকোনা, ঢাকার সাভারে হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। নোয়াখালী ও কুমিল্লায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আর দুই দিন আগের ঘটনায় নরসিংদিতে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়ি বহরে হামলা এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কেরানীগঞ্জের বাড়িতে হামলা হয়েছে। মিন্টুর গাড়ি বহরে হামলা হয় ফেনীর দাগনভূঞা এলাকায় যাওয়ার পথে। উভয় হামলার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে।
হামলা মামলার তালিকা দিয়েছে বিএনপি
বিএনপির পক্ষ থেকে চলতি আগস্ট মাসের শেষ সাত দিনে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ২৯ আগস্ট। তাতে তারা জানিয়েছে গত ২২ আগস্ট থেকে এপর্যন্ত ৫০টির বেশি স্থানে হামলা হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২০টি জায়গায়। এপর্যন্ত ১৫টি মামলায় দুই হজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে তার মধ্যে আছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, ফেনীর ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও ত্রিশাল, বরিশালের মেহিন্দিগঞ্জে, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলে ঘাটাইল ও সফিপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বাঁশখালী, ঝালকাঠি, যশোর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, নরসিংদীর রায়পুরা, রাজশাহীর কাশিডাঙ্গা। হামলা হয়েছে যশোরে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলাম, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল ইসলাম সাবু, মিজানুর রহমান ও ফেনীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়িতে। টাঙ্গাইলের সফিপুরে আহমেদ আজম খানের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
যুদ্ধ বনাম মাঠের খেলা
বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তাইফুল টিপু অভিযোগ করেন,” গত দুইদিনে আরো ১০-১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর আমাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়। আমরা চেষ্টা করেও মামলা করতে পারি না। আর আমরা কোনো এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগও সেখানে কর্মসূচি দেয়। আর প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়।”
এরইমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,” সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে, লড়াই শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ লড়াই বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা মরার লড়াই।” তিনি এই লড়াইয়ে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,” মাঠে খেলা হবে।” তার কথা,” লং ডিসটেন্স থেকে রিমোট কন্ট্রোল লিডারশিপ ডাক দিলে বাংলাদেশের পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় ঢেউ আসবে না, এই রাজপথে আন্দোলন হবে না। মাঠে আসুন, খেলা হবে।”
‘প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেননি’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অভিযোগ করেন,”জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের ঢাকা সফরের আগে বিদেশিদের দেখানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আন্দোলন করলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে না। তিনি তার কার্যালয় ঘেরাও করলেও বাধা না দেয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন চা খাওয়ানোর কথা। কিন্তু এখন বাস্তবে তার উল্টো ঘটছে। আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে সারা দেশে হামলা হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। ১৪৪ ধারা দিয়ে আমাদের কর্মসূচি পন্ড করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন,”হামলা মামলায় আওয়ামী লীগ ও তার অনুগত প্রশাসন অংশ নিচ্ছে। আমরা মামলা দিতে গেলে আমাদেরই গ্রেপ্তার করে রাখা হয়। আজকেও (বুধবার) কয়েকটি জায়গায় হামলা হয়েছে। তবে এই হামলা মামলায় আমরা ভীত নই। গত ১৫ বছর ধরেই আমরা এগুলো মোকাবেলা করছি। আমাদের আন্দোলন আরে তীব্র হবে। এই সরকারের আমরা পতন ঘটিয়ে ছাড়ব।”
‘বিএনপি নেতারা উসকানি দিচ্ছে’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন,”বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো হামলা হয়নি। পুলিশতো হামলা করেনি। তারা তো মিছিল সমাবেশ করছে। যেসব জায়গায় বিএনপি নেতারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে আমাদের কর্মীরা আমাদের নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুই-একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মির্জা ফখরুলই তো উসকানি দিচ্ছেন, যুদ্ধ ঘোষণা করছেন। তিনি যাকে নেতা মেনে দেশে বসে আন্দোলন করছেন সেই নেতা বিদেশে ক্যাসিনোতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। পাঁচটি কারণে অ্যামেরিকা তাকে ভিসা দেয়নি। সে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের গডফাদার ছিলো। সে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকারী।”
তার কথা,”বিএনপিই সন্ত্রাস করছে। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার ওপর হামলা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। দেশের সব জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। এখন তারা এই শোকের মাসে দ্রব্যমূল্যের কথা বলে খারাপ পরিস্থিতি করা চেষ্টা করছে। সরকার চেষ্টা করছে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা
Discussion about this post