প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্রফেসর ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। ঠিকমতো মাস্ক পরে না, হাত ধোয় না, স্বাস্থ্যবিধি মানতে চরমভাবে উদাসীনতা প্রদর্শন করে। অতিদ্রুত অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় না আনতে পারলে এই ভয়াবহ মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। গতকাল এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। প্রফেসর এ বি এম আবদুল্লাহ দীর্ঘ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে অসংখ্য চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি দেয়া হলো।
দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে দেখছেন?
পরিস্থিতি এক কথায় ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। টেস্ট বাড়লেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। আজকেই (গতকাল) তো জানতে পারলাম মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ২৫৮ জন ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। এখান থেকেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করা যায়।
এখন তো কঠোর লকডাউন চলছে; এর মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কী?
-দেখুন, করোনা একটি সংক্রমণ রোগ। অণুজীবের মাধ্যমেই এটা ছড়ায়। আমাদের সমাজে মানুষের অদ্ভুত কিছু মানসিকতা আছে। কিছু মানুষ আছেন যারা করোনা আছে এটা বিশ্বাসই করতে চান না। এ অবস্থায় লকডাউন দিয়ে শতভাগ সাফল্য লাভ করা আমাদের মতো দেশে প্রায় অসম্ভব। অনেকে আছেন তারা প্রকাশ্যেই বলেন ‘আমরা করোনায় মারা যাবো না। বরং লকডাউন দিলে না খেয়েই মারা যাবো।’ এ অবস্থায় দিনের পর দিন লকডাউন দিয়ে রাখা সম্ভব না। তা ছাড়া লকডাউন দিলে গরিব মানুষ শ্রমিক মেহনতি মানুষকে ঘরে রাখা যায় না। দায়িত্বের জায়গা থেকে সরকার কঠোরতা প্রদর্শন করতে পারে না। তাদেরকে ঘরে আটকে রাখতে হলে তো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জীবিকা নির্বাহ ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে হবে। সেগুলো না করতে পারলে লকডাউন দিয়ে সম্পূর্ণ সুবিধা নেয়া যাবে না।
কিন্তু সরকার তো পদক্ষেপ নিচ্ছেÑ তারপরও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ কী?
-প্রফেসর এ বি এম আবদুল্লাহ : এর কারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনীহা। আমাদের দেশে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। ঠিকমতো মাস্ক পরে না। হাত ধোয় না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে চায় না। এভাবে তো করোনা সংক্রমণ দূর করা যাবে না। এটা একটা সমন্বিত ব্যাপার। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সোস্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। আবার ব্যাপকভাবে টিকা নিতে হবে। এগুলো না করলে করোনা ছড়াতেই থাকবে।
পরিস্থিতি থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?
-ওই যে বললাম। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই সুফল পাওয়া যাবে। এক দিনে সেটি সম্ভব নয়। আপনি তো মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারছেন না। আবার স্বাস্থ্যবিধিও যদি ঠিকমতো মানুষ না মানে তাহলে তো লাভ হবে না। আমি কয়েক দিন ধরেই বলছি বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে গাইড লাইন দিয়েছে সে অনুযায়ী অন্তত শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হবে। গ্রামে গঞ্জে যেখানেই মানুষ পাওয়া যাবে ধরে ধরে টিকা দিতে হবে। এটা এমন একটা রোগ যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে টিকা দিতেই হবে। আমরা দেখেছি বর্তমান যে ঢেউ চলছে এতে যারা টিকা দেয়নি তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর যেহেতু টিকা এসে গেছে তাই দ্রুততার সাথে সবাইকে টিকা দিতে হবে।
অন্যান্য দেশগুলো করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করছে কিভাবে?
-সেখানে তো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। আর তাদেরকে লকডাউন দিলে তারা মান্য করে। আর তারা টিকা প্রদানের হার বাড়িয়েছে। দ্রুত সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছে। এ কারণে করোনার প্রাদুর্ভাবও সেখানে কমে আসছে।
সরকারের পদক্ষেপের সফলতা সম্পর্কে কিছু বলুন।
-ওই যে বললাম, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে গতকাল এক দিনে মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৭৭৯ জনের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মানুষের চলাচল সীমিত করা, লোকজনের সংমিশ্রণ কম হওয়া এবং ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে না পারলে এ মহামারী ঠেকানো যাবে না। চীন, ভারতের মতো দেশগুলো টিকার গতি বৃদ্ধি এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই এই মহামারীর রাশ টেনেছে। পরিস্থিতি আশানুরূপ নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাংলাদেশ সরকারও বেশির ভাগ লোককে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন সহজতর করে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া ১৮ ঊর্ধ্ব তরুণদেরকেও টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসবই সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। এসব বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
সূত্র: নয়া দিগন্ত
Discussion about this post