বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। সালমান এফ রহমান নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ২০১৭ সালের মার্চে প্রকাশিত চীনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুন গ্লোবাল এই তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা অনুযায়ী, ২ হাজার ২৫৭ জন ব্যক্তির মধ্যে তার অবস্থান ছিল ১ হাজার ৬৮৫তম।
সালমান এফ রহমান এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-১ আসনে নির্বাচন করতে গত ২৭ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি।
তাবৎ দুনিয়ার ধনকুবেরদের মধ্যে স্থান করে নিলেও সালমান এফ রহমানের দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তার কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই, নেই কোনো আসবাবপত্র; বৈদেশিক মুদ্রা নেই, নেই তার বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টও।
আসবাবপত্র-ইলেকট্রনিক সামগ্রী না থাকলেও ৩৪ লাখ টাকা মূল্যের যানবাহন রয়েছে সালমান এফ রহমানের। হলফনামা অনুযায়ী, তিনি ও তার স্ত্রী কোনো রকম সুদ ছাড়াই আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছেন ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা।
অতীতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়নি বলে উল্লেখ করেন সালমান এফ রহমান। যদিও ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে জিএমজি এয়ারলাইন্সে ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকলেও সালমান এফ রহমান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, ‘আমি একক বা যৌথভাবে আমার ওপর র্নিভরশীল কোনো সদস্য অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে আমি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করি নাই।’
হুরুন গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের সম্পদের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। যদিও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭৮ কোটি ৬০ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ টাকা। তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪২ কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৯২৭ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ম্যানুয়েল অনুযায়ী, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে হলফনামায় কোনো প্রার্থী তথ্য প্রদান না করলে অথবা কোনো অসত্য তথ্য প্রদান করলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোনো তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল না করা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার নিজ উদ্যোগে অথবা আদেশের ১৪ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন।
হলফনামা অনুযায়ী, আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের বার্ষিক মোট আয় ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৮ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় দেখানো হয় ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যদিও নিজ বা স্ত্রীর নামে কোনো বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট নেই বলে উল্লেখ করেন সালমান এফ রহমান।
ঢাকা-১ আসনে লড়তে মনোনয়ন জমা দেওয়া সালমান এফ রহমানের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ডিভিডেন্ট থেকে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৮ টাকা, চাকরি (সম্মানী ভাতা) থেকে ৪১ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ার ও আইএফআইসি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার বাবদ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫০ টাকা আয় দেখানো হয়।
তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন ঢাকা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২৭৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৪ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১২৮ টাকা।
বন্ড/ঋণপত্র/স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ৭৫ হাজার ও ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৬ টাকা। বাস/ট্রাক/মোটরগাড়ি/লঞ্চ/স্টিমার/বিমান ও মটরসাইকেল ইত্যাদির মূল্য ৩৪ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ দেখানো হয় ২০ কোটি ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৩০ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, সালমানের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ ৬০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণ ৪৫ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ টাকা। স্বর্ণ, অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা; আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৬১ টাকা।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এই প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৬ টাকার। এর মধ্যে রয়েছে অকৃষি জমি ২ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৬৮৭ টাকার। এ ছাড়া ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ টাকা মূল্যের দালান, আবাসিক/বাণিজ্যিক সম্পদ।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৮ কোটি ৯২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৭ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন বাবদ ২৫ কোটি ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৯ টাকা।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত সালমান এফ রহমানের দায়-দেনার মধ্যে রয়েছে ৬৮ কোটি ৫১ লাখ ৫৭ হাজার ২৭০ টাকা ও ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ১৪০ টাকা।
ফজলুর রহমান ও সৈয়দা ফাতিনা রহমানের সন্তান সালমান ফজলুর রহমান। তার বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলার মুকসুদপুরের বেথুয়া গ্রামে।
হলফনামায় ম্যাজিস্ট্রেট/নোটারি পাবলিক এ এ এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এর মাধ্যমে শনাক্তকৃত হইয়া অদ্য ২৭ নভেম্বর আমার সম্মুখে শপথপূর্বক উপরে বর্ণিত হলফনামা প্রদান করিয়াছেন।’
এর আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচিত না হওয়ায় সালমান এফ রহমানের প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়নি হলফনামায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে হেরে যান।
২০০৬ সালে দোহারে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে সেনা-সমর্থিত মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ছাড়া পান তিনি।
সূত্র: প্রিয় ডটকম