অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারের কথিত মাদক বিরোধী অভিযানের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিনই পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে। গত ৯ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধের নামে প্রায় ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতিদিন বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের কারণে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলো কঠোর সমালোচনা করছে। বাসা-বাড়ি থেকে ধরে এনে গুলি করে হত্যার পর বন্দুকযুদ্ধের নামে চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষও।
বিশেষ করে মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও তার পরিবারের লোকজন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকায় সরকারের এই মাদক বিরোধী অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে। মাদক ব্যবসায় এমপি বদির জড়িত থাকার বিষয়ে অকাট্য প্রমাণসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন বদির বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নাই।
তবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে মাদক ইয়াবার গডফাদার ও ব্যবসায়ীর তালিকায় টানা ১০ বছর ধরে বদির নাম ছিল। কিন্তু গত মার্চ মাসে একটি সংস্থার তালিকা থেকে সেই নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে সেই তালিকায় বদির পাঁচ ভাই, এক ফুপাতো ভাই, দুই বেয়াই ও এক ভাগনের নাম আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্প্রতি দেশের মাদক গডফাদারদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। দেশজুড়ে যার সংখ্যা ১৪১ জন। এতে ক্ষমতাধর অনেক রাজনীতিকের ভয়ংকর কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসে। ৩১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়।
তালিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠার একটি প্যারায় চোখ আটকে যাওয়ার মতো। কারণ সেখানে বলা হয়েছে, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’
তালিকায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও উঠে এসেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকা সংক্রান্ত গোপনীয় প্রতিবেদনের ভূমিকা অংশে বলা হয়েছে, ‘সরকারদলীয় এমপি হওয়ার সুবাদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী/সহযোগী নিয়ে তিনি ইচ্ছেমাফিক ইয়াবা ব্যবসাসহ অন্যান্য উৎস হতে অবৈধ আয়ে জড়িত আছেন। শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা করার সাহস রাখে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জেলার অন্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বা টেকনাফের যে কোনো চাঁদাবাজ এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সক্ষম নয়।
কিন্তু, বিভিন্ন সংস্থার একাধিক তদন্তে এমপি বদির নাম থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিন্তু প্রমাণ নেই। তাকে ধরার যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তালিকা অনুযায়ী যদি অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদেরকে ধরে ক্রসফায়ার দেয়া যায় তাহলে সেই তালিকায় থাকা বদিকে ধরা যায়না কেন? বদিকে গ্রেফতার করতে আবার আলাদা প্রমাণ দরকার হবে কেন?
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বদিকে ধরার জন্য যদি এই প্রমাণ যথেষ্ট না হয় তাহলে, একই প্রমাণ দিয়ে ৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হল কেন? বদির জন্য সরকার আর কী প্রমাণ চায়?
তাদের মতে, বদির কাছ থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ভাগ পাচ্ছেন। এজন্য তারা বদিকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন।