অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা পদ্ধতি বাতিলের মত করেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনও ঝুলিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা আন্দোলনের তীব্রতা যখন তুঙ্গে, তখন আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবেই সংসদে এক বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের উপর রেগেমেগে পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ঘোষণার প্রায় দেড় মাসেও কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করেনি সরকার। আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর এখন সরকারের এমপি মন্ত্রীরা বলছেন কোটা আন্দোলনকারী ও নেতৃত্বদানকারীরা শিবিরের নেতাকর্মী ছিলো। এমনসব উসিলা দেখিয়ে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন এখনো ঝুলিয়ে রেখেছে সরকার।
এদিকে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত নির্বাচিত হয়নি। সেটিও ঝুলিয়ে রেখেছেন সংগঠনটির অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রেও কারণ সেই শিবির। বলা হচ্ছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে শিবির-ছাত্রদলের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এজন্য ভালো মত যাছাই বাছাই করতে গিয়েই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে বিলম্ব হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রলীগকে কি তাহলে শিবির-ছাত্রদলই নিয়ন্ত্রণ করছে? বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বেও নাকি শিবিরের সাবেক সক্রিয় কর্মী রয়েছেন। খোদ সভাপতি সেক্রেটারিকে নিয়েও এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এজন্য কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থাৎ সিলেকশনের মাধ্যমে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে ১১১ ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যে ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ মাসের ১১ ও ১২ তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে দলটির শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতা নির্বাচন করা ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। এর আগে তিন দফা ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করে। তবে গত দুবার ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হলেও তাদের নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা হয়। সর্বশেষ দুই কমিটির মাধ্যমে সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হতাশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট প্রক্রিয়া বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান শেখ হাসিনা। এরপর ইলেকশন নয়, বরং সিলেকশনে নেতা বানানোর সিদ্ধান্ত জানান তিনি।
সরকার বিভিন্ন অনুসন্ধান থেকে জানতে পেরেছে, সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিমধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিবির-ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছাত্রলীগে যোগদান করেছেন। কেউ কেউ পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। কেউ কেউ বাবা-ভাই কিংবা স্বজনদের রক্ষা করতে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছেন। আর দল ভারি করতে অনেক ছাত্রলীগ নেতা অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অর্থেরও লেনদেন হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, বিদায় নিতে যাওয়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ ১০টি পদে রয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শীরা। সরাসরি ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতি করে এসেছেন এমন দু’জনও রয়েছেন। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে ২৮তম সম্মেলনে ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের ফলে সিন্ডিকেটের কলকাঠিতে এভাবে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান। বিষয়টি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ কারণে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে এবার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অধিকতর যাচাই-বাছাই হচ্ছে। পদপ্রত্যাশী সবার অতীত, পারিবারিক পরিচয়সহ জীবনবৃত্তান্ত এবং সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা সংস্থার পাঁচ স্তরের প্রতিবেদন মিলিয়ে দেখে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এরই জের ধরে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা ৩২৩ প্রার্থীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতা হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার আগে প্রার্থীদের রাজনৈতিক মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষমতার পরিবর্তনে সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ছাত্রনেতাই তাদের দল পরিবর্তন করেন। এটা হতে পারে সুবিধা ভোগের জন্য, হতে পারে ক্যাম্পাসে টিকে থাকার জন্য। বর্তমান সরকারের দমন পীড়ন থেকে বাঁচতে এরকম অনেকেই ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছেন। তবে এসব অনুপ্রবেশকারী শিবির-ছাত্রদল ঠেকানোই ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন বিলম্বের মূল কারণ নয়।
জানা গেছে, বিদায় নিতে যাওয়া সভাপতি সেক্রেটারির উপর এমনিতেও শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট নন। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে তারা সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। যা সরকারকে অনেকটাই বেকায়দায় ফেলেছে। আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের সহযোগীতায় হামলা চালালেও আন্দোলন দমাতে পারেনি ছাত্রলীগ। সরকার চেয়েছিলো আরো দাঙ্গা হাঙ্গামা চালিয়ে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে ছাত্রলীগ আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই মূলত আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের জন্য আরো দাঙ্গাবাজ নেতৃত্ব খুঁজছেন শেখ হাসিনা।