অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ফিলিস্তিনে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মত অনেক সংগঠন থাকলেও প্রেসিডেন্ট পদে আছেন ফাতাহ’র মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নেতৃত্বটি একটি অথর্ব এবং সিদ্ধান্তহীন নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকা ও ইসরাইলের তীব্র চাপের মুখে অনেকক্ষেত্রেই বর্তমান নেতৃত্ব ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে রামাল্লায় ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিলের যে বৈঠক হয়েছে তাতে উপস্থিত সকলেই অনুধাবন করেছেন যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মাহমুদ আব্বাসের আগে যে দৃঢ়তা ছিল তা এখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এই বৈঠকে ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিল ইসরাইলের সাথে সম্পর্ককে নতুনভাবে নির্ধারন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। এই কাউন্সিল একই সংগে ৯০ এর দশক জুড়ে ওয়াশিংটনে এবং কায়রোতে ফিলিস্তিনের তদানীন্তন নেতৃত্বের সাথে ইসরাইলের যেসব চুক্তি হয়েছিল সেই সব চুক্তিকেও অবাস্তবায়নযোগ্য এবং মেয়াদউত্তীর্ন হিসেবে অভিহিত করেছে। সেই সাথে তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তকেও তারা প্রত্যাখান করেছে।
৮২ বছর বয়স্ক মাহমুদ আব্বাস আগাগোড়াই মনে করেন যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটাই পথ আর তা হলো শান্তিপূর্ন আলোচনা। সশস্ত্র বিপ্লব দিয়ে কখনোই এই লক্ষ্য অর্জন করা যাবে বলে তিনি মনে করেন না।
কৌশলগত ব্যর্থতা
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিল যেসব সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহের বৈঠকে নিয়েছে তা সমঝোতার পথকে আরো রুদ্ধ করে দেবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ফিলিস্তিনের বর্তমান নেতৃত্ব এতটাই দুর্বল ও বিভেদ-বিভাজনে আক্রান্ত যে তারা ইসরাইলের সাথে ইতোপূর্বে করা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা কিংবা সমঝোতা উদ্যোগ অব্যহত রাখা- এই দুটোর কোনটা করতেই সক্ষম নয়।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষক মোহামাদ দালবাহ মনে করেন, ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের এই সংকটের মুল কারন অসলো চুক্তি যা ইয়াসির আরাফাত ইসরাইলের সাথে সাক্ষর করেছিলেন এবং পরবর্তীতে মাহমুদ আব্বাসও সেই চুক্তিটি অনুসরন করে গেছেন।
তার মতে অসলো চুক্তিটি ফিলিস্তিনিদের কৌশলগত ভুল। কেননা এর মাধ্যমে কখনোই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কিংবা ১৯৪৮ সালে নিজ ভুমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনিদের তাদের পুরনো ভুমিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। ১৯৯৩ সালে পিএলও ইসরাইলের সাথে এই চুক্তিটি সাক্ষর করেছিল।
এই চুক্তি অনুযায়ী ৫ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের মধ্যে বিদ্যমান সকল ইস্যুতে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি সাক্ষরের ২৫ বছর পরও এখনও পুরনো সেই সংকটগুলোর কোনটারই সুরাহা হয়নি।
ইসরাইলী সংসদের ফিলিস্তিন বিষয়ক সদস্য জামাল জাহালাকা মনে করেন, বর্তমান ফিলিস্তিন সরকার সমঝোতা বা সংগ্রাম কোনটাই করার মত যোগ্য নয়। তার মতে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের উচিত জনগনের মানসিকতা অনুধাবন করা এবং ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করা। কেননা ইসরাইল পূর্বে সাক্ষর করা কোন চুক্তিই মানছেনা আর তাদের আগ্রাসী কর্মকান্ড শুধু বেড়েই যাচ্ছে। আর কেবলমাত্র প্রতিরোধ আন্দোলন দিয়েই ইসরাইলকে নমনীয় করা সম্ভব।
পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে সংকট
গত সপ্তাহের বৈঠকে ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিল মাহমুদ আব্বাসকে আবারও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। একই সঙ্গে তারা ১৫ সদস্যের নির্বাহী পরিষদও নির্বাচন করে যার অধিকাংশই আব্বাস ঘনিষ্ঠ।
৮২ বছরের আব্বাস বর্তমানে অনেকগুলো জটিল ব্যধিতে আক্রান্ত। তিনি যে কোন সময়েই দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন এটা জানার পরও এবারের বৈঠকে ফিলিস্তিন ন্যাশনাল কাউন্সিল পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে কোন আলোচনা করেনি।
জানা গেছে আব্বাস তার পরবর্তী সময়ের জন্য পিএলও’র নেতৃত্বকে দুই ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। একজন নেতা থাকবেন যিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নেতৃত্ব দিবেন আর আরেকজন ফাতাহ দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আর আব্বাস চাইছেন যাতে সামনের দিনগুলোতে এই দুই পদে দুজন ভিন্ন ব্যক্তিই চলে আসে।