অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
হঠাৎ করেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মাথা গরম হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি, সরকারদলীয় নেতারা তারেক রহমানকে নিয়ে এমন কোনো অশালীন ভাষা নেই যা তারা ব্যবহার করছেন না। বিশেষ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডন যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারি মহলে সমালোচনার মাত্রা আরও তীব্রতা পেয়েছে।
শেখ হাসিনা প্রতিজ্ঞা করেছেন তারেক রহমানকে যেকোনো উপায়ে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশে আনবেন। লন্ডনে শেখ হাসিনা যে কয়টি সভায় বক্তব্য দিয়েছেন প্রত্যেকটির মূল আলোচনার বিষয় ছিল তারেক রহমান। আর শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বললেন তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিত্ব প্রত্যাহার করেছেন। তার এ বক্তব্য নিয়ে শুধু লন্ডনে নয়, দেশের রাজনীতিসহ সর্বমহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বলা যায়, সব ইস্যুকে ছাপিয়ে আলোচনার মূল কেন্দ্রে এখন তারেক রহমান।
হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা তারেক রহমানের বিষয়টিকে কেন সামনে নিয়ে আসলেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের সময় সংঘঠিত ৩টি ঘটনাকে চাপা দিতেই আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একযোগে তারেক রহমানকে নিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছেন। লন্ডনের ৩টি ঘটনাই ছিল শেখ হাসিনার জন্য খুবই অপমানজনক।
প্রথমত: কমনওয়েলথ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে যোগ দেয়ার সময় শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ওপর হামলা করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ও সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছিল। মূলত তাদের বিক্ষোভ থেকেই উপমন্ত্রী জয়ের ওপর হামলা হয়। বিএনপিরই কিছু নেতা তাকে রক্ষা না করলে হয়তো তার অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো।
ঘটনার পর পরই হামলার ভিডিও সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বিতীয়ত: লন্ডনে গিয়ে শেখ হাসিনা কথিত উন্নয়নের গল্প শোনানোর আসর বসিয়েছিলেন। ওই আসরে লন্ডনের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল৪ এর সাংবাদিক বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা চুপ হয়ে যান। তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন নি। এঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সাংবাদিক এলেক্স থমসনও টুইট বার্তার মাধ্যমে ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে দেন। এরপরই মানবাধিকার প্রশ্নে চুপ থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তৃতীয়ত: কমনওয়েলথ সম্মেলনের মূল অধিবেশনে যোগ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে ঝাড়ু প্রদর্শন, ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওই অধিবেশনস্থলের চারপাশে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। ওই মিছিল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করা হয় এবং তাকে ঝাড়ু দেখানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব করেছে। ৩টি ঘটনাকে তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এসব ঘটনা নিয়ে যাতে বাংলাদেশে খুব বেশি একটা আলোচনা না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তারেক রহমানের ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা।
লন্ডন সফর নিয়ে করা গতকালের সাংবাদিকে সম্মেলনেও তারেক রহমানের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন প্রধানমন্ত্রী। তাকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী উল্লেখ করে, বিএনপি কেনো তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানালো সেটারও সমালোচনা করেন তিনি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কঠিন জবাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, তারেক রহমান যোগ্য বলেই আমরা তাকে নেতা বানিয়েছি, এ নিয়ে আপনি বলার কে? ফখরুল আরো বলেন, তারেক রহমান কোন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত? তাকে খালাস দেয়ায় বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
তবে, রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, তারেক রহমান ইস্যুতে সরকার ধরা খেয়েছে। নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের ভুয়া চিঠি দেখানোয় সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে যুক্তরাজ্যও। এনিয়ে এখন যুক্তরাজ্য তদন্ত করছে।