জুনায়েদ আব্বাসী
বিগত ১০ বছরে করা কথিত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আবারো ক্ষমতা চান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দাবি, বিগত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এত উন্নয়ন করতে পারেনি। ২০১৪ সালে জনগণ আওয়ামী লীগকে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে। তাই উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা দরকার।
বিগত ১০ বছরে দেশে বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে বলে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা দাবি করলেও বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ মনে করে সামগ্রীকভাবে দেশ অনেক পিছিয়ে গেছে। দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শিক্ষাব্যবস্থা। জনগণ জীবন-যাপন করছে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। একজন নারী বাসা থেকে বের হলে সম্মান নিয়ে বাসায় ফিরে আসার গ্যারান্টি নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটাই অবনিত হয়েছে যে সর্বত্র এখন বিরাজ করছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। মানুষ সব সময় গুম-অপহরণের ভয়ে আতঙ্কে থাকে। আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাতো তাদের বাসা-বাড়িতেই থাকতে পারেন না। বলা যায় মানুষের যত প্রকার অধিকার আছে বর্তমান সরকার সবই হরণ করে নিয়েছে।
এরপরও শেখ হাসিনা প্রতিদিন একই কথা বলে যাচ্ছেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আসতে হবে। তবে মুখে উন্নয়নের কথা বললেও জানা গেছে শেখ হাসিনার অন্তরের বাসনা ভিন্ন। তার টার্গেট আবার ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে একেবারে পঙ্গু করে দেয়া।
১৯৮৩ সালে শেখ হাসিনা দেশে এসেই বলেছিলেন, আমি রাজনীতিতে এসেছি প্রতিশোধ নিতে। শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট নিহত তার পরিবারের সদস্যদের প্রতিশোধ নিতে একটি মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলেও নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করার সুযোগ ছিল না। বিএনপি-জামায়াতকে কোনঠাসা করতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। তাই গত শাসনামলে সেটা করতে পারেন নি।
এরপর ২০০৯ সালে তার সামনে প্রত্যাশিত সুযোগটি চলে আসে। ক্ষমতায় এসেই প্রথমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শেষ করেন। যেহেতু আসামিরা সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন তাই আগে সেনাবাহিনীতে নির্মূল অভিযান চালান। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল এরই অংশ। এরপর বিএনপি-জামায়াতপন্থী যত অফিসার ছিলেন সবাইকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান। এভাবে সেনাবাহিনীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। যাতে করে শেখ হাসিনার অপকর্মের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে কোনো চাপ না আসে।
এরপর শুরু করেন জামায়াত নির্মূলের অভিযান। কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। আর গুম-খুন, হত্যা, গ্রেফতার নির্যাতনের মাধ্যমে কোনঠাসা করে ফেলা হয় জামায়াতকে। জামায়াতকে দুর্বল করতে সরকারের ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলে যায়।
তারপর ২০১৭ সাল থেকে অভিযানে নামে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে নির্মূলে। শেখ হাসিনার ধারণা শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। আর তারেক রহমানের নির্দেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর তার সমস্ত ক্ষোভ। যদিও এসব অভিযোগের তেমন ভিত্তি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনা মনে করেন জিয়াউর রহমানের পরিবারকে শেষ করতে পারলে বিএনিপ নামের দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিচ্ছেন না। আর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায়ও তারেক রহমানের ফাঁসি হবে। এমনকি সরকার যদি তারেক রহমানকে কোনোভাবে দেশে আনতে পারেন তাহলে ২১ আগস্টের মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়ে সেটা কার্যকরও করতে পারেন।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও সহজে মুক্তি দেবে না সরকার। এদিকে খালেদা জিয়া কারাগারে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কারাগারেই খালেদা জিয়ার মৃত্যু হতে পারে।
জিয়াউর রহমানের পরিবার ও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে শেখ হাসিনার আরও কিছু দিন সময় দরকার। এজন্য তিনি আগামীতেও ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন। মূলত উন্নয়ন নয়, শেখ হাসিনার টার্গেট চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেয়া।