অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত ১০ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, হত্যা, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গুম-অপহরণ, ধর্ষণ, পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ সব অপকর্মই তারা করে যাচ্ছে। এমনকি গত দুই দিন আগে সমকামীতার অভিযোগে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম সুমনকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে।
এছাড়া বিরোধী দল তথা বিএনপি-ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের সব সীমা অতিক্রম করেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এখন মৃত্যুর পর কবরে গিয়েও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের এক নেতার ইন্ধনে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সাভার গ্রামে ফরিদপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম লিটনের কবরে তাণ্ডব চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী।
তারা কবরস্থান পরিষ্কার করার নামে লিটনের বাবা ফরিদপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মাস্টার, লিটনের ভাই অ্যাডভোকেট জার্জিস হোসেন, চাচাত ভাই জনতা ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার নুরুজ্জামান খুরু, চাচি রাবেয়া খাতুনের কবর থেকে নেমপ্লেট ছুড়ে ফেলে দেয়ে। এছাড়া কবরের বাঁশের ঘেরা ও সিমেন্টের খুঁটি উপড়ে ফেলে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। আর লিটনের কবরের ওপর লাঠিপেটা করে। এ ঘটনায় পুরো পাবনা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সন্ত্রাসীরা সম্মিলিতভাবে লিটনের কবরের ওপর বাঁশের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে সমস্বরে উল্লাস করে ও জোরে জোরে বলতে থাকে, হত্যা করার পরেও তুই অশান্তি সৃষ্টি করেছিস।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ির নিজ বাড়ির কাছে মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখীর সামনে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে যুবদল নেতা লিটনকে হত্যা করে। আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে আসামিরা হত্যা মামলার সাক্ষী ও স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালায়। পাশাপাশি হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের গ্রামছাড়া করে।
প্রায় দুই বছর ধরে সাভার গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে নিহত লিটনের বৃদ্ধা মা, লিটনের বিধবা স্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সঙ্গীতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিটনের শিশুকন্যা বৈশাখী, লিটনের ভাই সাইফুল আজম, ভাতিজা ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বাবুলসহ অন্যান্য সাক্ষী ও স্বজনরা।
গোরস্থান কমিটির সভাপতি ও লিটনের ভাই সাইফুল আজম দুঃখ করে জানান, শুধুমাত্র যুবদল নেতা হওয়ার অপরাধে লিটন হত্যার আসামিরা গোরস্থান পরিষ্কার করার নামে আক্রোশবশত তার পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে এ কাজ করেছে। ফরিদপুরের একজন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার ইন্ধনে তারা এই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বইছে সমালোচনার ঝড়।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বলছেন, এ ঘটনার দ্বারা প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগে কোনো মানুষ নেই। এটি এখন জানোয়ারদের কারখানায় পরিণত হয়েছে। কারণ, যাদের ভেতর ন্যূনতম মনুষত্ববোধ আছে তাদের দ্বারা এমন কাজ সম্ভব না। এটা শুধু জানোয়ারদের দ্বারাই সম্ভব। তাদের কাছে কবরের লাশও নিরাপদ নয়।