অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা আর রমনা বটমূলের আয়োজন যেনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুজো মণ্ডপের উৎসব। ‘পুজো, বসন্ত উৎসবের মিলমিশে একাকার ঢাকার নববর্ষের সকাল’। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের বিতর্কিত মঙ্গল শোভাযাত্রা আর রমনা বটমূলের আয়োজনকে এভাবেই্ উপস্থাপন করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ভিনদেশী হিন্দুত্ববাদি সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং এটি দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশ্বাস বা ঈমান বিরোধী বলে এর প্রতিবাদ করে আসছে। অবশেষে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হিন্দুত্ববাদি সংস্কৃতি হিসেবেই উপস্থাপন করলো।
আন্দন্দবাজারের প্রতিবেদনটির শিরোনাম- ‘ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া’। একডালিয়া হলো কলকাতার একটি স্থান বা বসতি। যেখানে একডালিয়া এভারগ্রীন ক্লাব নামে কলকাতার সবচেয়ে বড় ও ঝাঁকঝমকপূর্ণ পূজা মণ্ডপ রয়েছে। অষ্টমী হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন। দেবীর সন্ধ্যাপূজা আর কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে তারা। বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কলকাতার হিন্দুদের সেই একডালিয়ার পুজো মণ্ডপের অষ্টমী উদযাপনের সাথেই তুলনা করেছে আনন্দবাজার।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে র্যালি বের করা হয়। বলা হয় এর মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করা হয়। ঠিক যেভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পুজোর মত তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে তাদের কাছে মঙ্গল কামনা করে। আনন্দবাজার এজন্যই বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখের অন্যান্য কার্যকলাপকে পূজা মণ্ডপের উৎসবের সাথে তুলনা করেছে। একই কারণে ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখের কিছু কার্যকলাপ ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।
আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে! কখনও মনে হচ্ছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার বা একডালিয়ার পুজো মণ্ডপ। কখনও বা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের চেহারা। তা সে রমনার বটমূলের বৃন্দগানই হোক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুজো, বসন্ত উৎসবের মিলমিশে একাকার ঢাকার নববর্ষের সকাল।
দিনাজপুরের নবম শ্রেণির ছাত্রী ঝিলিক বিশ্বাস নববর্ষে মামাবাড়ি ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মা ও বোনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। নববর্ষের জন্য নতুন ডিজাইনের শাড়ি পরে ওরা তিন জন। ঝিলিকের মা প্রতি বছরই নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করেন। ‘‘এটাই এখন আমাদের জাতীয় উৎসব। যেখানেই থাকি ঠিক চলে আসি,’’ বলছিলেন ঝিলিকের মা। তত ক্ষণে জনস্রোত নেমে পড়েছে রাস্তায়। হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়িয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা দড়ির ব্যারিকেড দিয়েও উৎসাহী জনতাকে ঠেকাতে পারছেন না।অষ্টমীর রাতে কলকাতায় যেমন হয়। শোভাযাত্রায় মন্ত্রী-সান্ত্রি সবাই ছিলেন। শোভাযাত্রা ঘিরে থিকথিক করছিল পুলিশ। তাতে অবশ্য ঝিলিকদের আনন্দে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।
শুক্রবার রাতে দেখছিলাম রাস্তায় ছেলেমেয়েরা ভিড় করে আলপনা দিচ্ছেন। গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমনটা এখন পুজোর সময়ে কোনও কোনও রাস্তায় হয়, বাংলাদেশের নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের ঢঙে। শনিবার ভোরে হোটেলের জানলা খুলে দেখি সেজেগুজে রাস্তায় নেমে পড়েছেন মানূষ। কেউ যাচ্ছেন রমনা ময়দানে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। সকাল সাতটায় বন্ধ হয়ে গেল যানবাহন। গোটা শহর মেতে গেল বর্ষবরণে।
‘‘শুধু ঢাকা নয়, প্রতি জেলাতেই বর্ষবরণের মেজাজ এমনই,’’ বলছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত কর্তা নুরুল ইসলাম। শুধু পুজো নয়, কলকাতার সরস্বতী পুজো, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র মেজাজও যেন ধরা পড়ল বাংলাদেশের এই নববর্ষে! জাতি-ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে এ যেন সর্বজনীন উৎসব। নুরুল বলছিলেন, ‘‘কর্মসূত্রে সারা বছর নানা দেশে ঘুরে বে়ড়াই। কিন্তু বছর পয়লায় এখানে ফিরবই।’’
বাঙালির উৎসবের সঙ্গেই মিলেমিশে রয়েছে খাবার। প্রাতরাশে কোথাও পান্তা ভাত আর শুঁটকি মাছ, কোথাও বা পান্তা আর ইলিশ মাছ ভাজা। এমনকী পাঁচ তারা হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের মেনুতেও অন্যতম আকর্ষণ পান্তা আর ইলিশ ভাজা! সঙ্গে শুকনো লঙ্কা পোড়া, পেঁয়াজ, গন্ধরাজ লেবু, বেগুন-চালকুমড়ো ভাজার সঙ্গে লইট্যা আর শেদল শুঁটকিও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই নববর্ষে ইলিশের বদলে শুঁটকি খাওয়ার আর্জি জানান, ঢাকাইয়া পাতে এ দিন ইলিশ-শুঁটকির সহাবস্থানই ছিল বেশি।