অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরমের সাথে সংযুক্ত মেয়েদের ছবিতে মাথায় ওড়না থাকলেই সেসব ছবিকে বাতিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বেশ কয়েকজন আবেদনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবেদনকারীর ছবিতে দুই কান ও চোখ খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কান ও চোখ খোলা রেখেই মাথায় ওড়না ব্যবহার করে ছবি তোলা হলেও শুধুমাত্র ওড়নার কারনে সেসব ছবি বাতিল করা হয়েছে এবং পুনরায় ওড়না ছাড়া ছবি তুলে তাদেরকে আবেদন করতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের অ্যাডমিশন অপসনে গেলেই ছবি সংক্রান্ত নির্দেশনাটি পাওয়া যাবে। সেখানে বলা হয়েছে- “কোন আবেদনকারীর ছবিতে দুই কান ও চোখ দেখা না গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছবিটি গ্রহণ করবে না। যদি কোন আবেদনকারী ইতোমধ্যে এরূপ ছবি আপলোড করে থাকেন (টাকা জমা দেয়া হোক বা না হোক) তাকে “আমি নই” বাটনে ক্লিক করে সঠিক ছবি দিয়ে পুনরায় আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায় আবেদনপত্র বাতিল হবে। সঠিক ছবি দিয়ে আবেদনের পর ব্যাংকে পুনরায় টাকা জমা দিতে হবে। সঠিক ছবির পে-স্লিপের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়া হলে আবেদনকারীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছবি সংশোধনের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাতে দুই কান ও চোখ খোলা ছবি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেই নির্দেশনা মেনে তোলা ছবিতেই কেবল ওড়না থাকার কারনে বাতিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি পরোক্ষভাবে মেয়েদের ওড়নাকেই নিষিদ্ধ করলো?
একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন খুলনার শেখ নুরুল করিম। তিনি অ্যানালাইসিস বিডিকে জানান, তাঁর বোন এবার এইচএসসি পাস করেছে। তার ইচ্ছা সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। কিন্তু বোনের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে গিয়ে তিনি পড়েছেন মহা ঝামেলায়। প্রথমে তার বোনের দুই কান ও চোখ খোলা রাখা একটি ছবি দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করেন তিনি। পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া নাম্বারে ফোন দিয়ে এই ছবি হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় মাথায় ওড়না দেয়া ছবি অনুমোদিত নয়। পরে পুনরায় ওড়না ছাড়া ছবি দিয়ে ও পুনরায় টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে তার বোনকে।
শেখ নুরুল করিম জানান, তার বোনের কয়েকজন বান্ধবীকেও এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তার মতে, তাদের পরিবার একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার। তার বোনসহ পরিবারের মেয়েরা সবসময় পর্দা করেই চলাফেরা করেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিধি নিষেধ তাদের ধর্ম পালন কিংবা পোশাক পরিধানের স্বাধীনতার প্রতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকও তাদের সন্তানদের নিয়ে এমন বিড়ম্বনার প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাদের মতে, দুই কান ও চোখ খোলা রাখার নির্দেশনাটিই একটি বাড়াবাড়ি। পরীক্ষার হলে মেয়েদের কানে হেডফোন কিংবা কোনো ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ থাকায় সেখানে কান খোলা রাখার ব্যবস্থা থাকতে পারে। কিন্তু ছবিতে কান খোলা রাখার নির্দেশনার মানে কি? তার উপর এখন পরোক্ষভাবে ওড়নাকেই নিষিদ্ধ করাটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এক প্রকার ধৃষ্টতা।
তাদের মতে, বাংলাদেশে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ওড়না পরাটা একটা ঐতিহ্য। দেশের নব্বই ভাগ মুসলমান তাদের ধর্ম পালন করতে গিয়ে কিংবা পোশাক পরার স্বাধীনতা থেকেই ওড়না বা হিজাব পরিধান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কতিপয় ধর্ম বিদ্ধেষী লোকের কারনে তাদের এই স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে পারে না।
Discussion about this post