অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাগম ছিল অনেক কম। শুধু শোভাযাত্রা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও জনসমাগম ছিল তুলনামূলক কম। সাধারণ দর্শনার্থীরা বলছেন, পহেলা বৈশাখের আগে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আনন্দের যে আমেজ বিরাজ করতো, এবার সেটাও তেমন ছিল না। তবে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন উৎসবে আগতরা। অন্যদিকে ঢাবি উপাচার্যের দাবি, সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে উৎসব হলে মানুষ কম কম লাগে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিনিও সন্তুষ্ট।
শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা ছাড়াও এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, রূপসী বাংলা ঘুরে আবারও শাহবাগ, টিএসসি হয়ে চারুকলায় গিয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া অনেকেই জানান, তারাও লক্ষ করেছেন এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় জনসমাগম গতবারের তুলনায় কিছুটা কম। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও মানুষ কম এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত হয়েছে ৪৮ ঘণ্টাও পার হয়নি। এই আন্দোলনকে ঘিরে কয়েকদিন অস্থিরতা ছিল। তার রেশ এখনও রয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে এখনও থমথমে ভাব। আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর অনেকেই বাড়ি চলে গেছে। আবার অনেকেই হলে অবস্থান করলেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়নি। অন্যান্যবারের মতো বৈশাখী উৎসবের আমেজ ঢাবির অনেক শিক্ষার্থীর ভেতরেই নেই। এ কারণেই হয়তো এই শোভাযাত্রায় জনসমাগম কম।’
তবে অধিকাংশের মতে, মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে মানুষ ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাচ্ছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারীদের বস্ত্রহরণের ঘটনায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতি নারীদের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত পশু পাখির মূর্তি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন পশু পাখির মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা একটি বিশেষ ধর্মের সংস্কৃতির সাথে মিলে যায়।
এদিকে হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোও এই শোভাযাত্রার বিরোধীতা করে আসছে বহুদিন ধরে। তাদের মতে, বর্ষবরণের নামে মূলত মুসলমনাদের ঈমান-আক্বীদা বিরোধী ভিনদেশী হিন্দুত্ববাদি সাংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে যে র্যালি বের করা হয়, এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? ইসলামের বিশ্বাস মতে কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না।
ইসলামী দলগুলোর এসব প্রতিবাদ ও প্রচারণায় দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে। যে কারণে বিতর্কিত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তারা একপ্রকার বয়কটই করেছে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বয়কট করলেও পহেলা বৈশাখের দিনে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে বেড়াতে মানুষ ঠিকই বের হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব মঞ্চ বানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো, এ বছর সেসব স্থানের কয়েকটি ফাঁকা পড়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনের মাঠে কোনও আয়োজন নেই। এছাড়া টিএসসির সামনে ডাচেও কোনও আয়োজন দেখা যায়নি। সেখানে দর্শনার্থীদের বসে জিরিয়ে নিতে দেখা গেছে। তবে মল চত্বর, কলাভবনের সামনে এবং চারুকলা অনুষদ এলাকায় মঞ্চ বানিয়ে উৎসব করতে দেখা গেছে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সৈয়দ শামসুল আলম অবশ্য সমাগম কম হওয়ার অন্য কারণ দেখান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে রোদের তেজটা বেশি। আমি, আমার স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সকালে একসঙ্গে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রৌদ্রের কারণে আমি একাই এসেছি। দুপুরে বাসায় ফিরে গিয়ে বিকালের দিকে হয়তো সবাইকে নিয়ে আবার আসবো।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রাটি এবার বেশ সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আগের চেয়েও অনেক ভালো। সুশৃঙ্খলভাবে যখন কোনও উৎসব হয়, তখন মানুষ একটু কম কমই লাগে। কিন্তু মানুষ যখন বিশৃঙ্খলভাবে উৎসব করে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তখন মানুষ বেশি বেশি মনে হয়।’ তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।