কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মারধর ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ কর্মীরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
হলে হামলা ও সাধারণ ছাত্রীদের মারধরের সময় পরিবর্তন ডটকমের প্রতিবেদককে ফাহমিদা লুবনা নামে একজন ছাত্রী ফোন করে তাদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের বর্বর হামলার ভিডিও চিত্র পাঠায়। ওই সময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “এখানে নেটওয়ার্ক খুব সমস্যা ভাইয়া। ওরা কেন এমন করছে? ওরা কাপুরুষ।”
এরপর তার সঙ্গে মোবাইলে আর যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। অপর এক ভিডিওতে সাদিয়া ফারজানা ডিনা ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার বিবরণ তুলে ধরেন।
পরিবর্তন ডটকম প্রতিনিধি জানান, সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদা বেগম নামের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন। তাকে জরুরী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীদের পাঠানো ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা জমে আছে।
এ ঘটনায় হলের ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হলে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর রুমের দরজা বন্ধ করে আটক থাকলে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় হলের আবাসিক শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতিতে জানা যায়, ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রীরা হলের গেট ভেঙ্গে বের হবার চেষ্টা করছে। হলের ভেতর জড়ো হয়ে ছাত্রীরা স্লোগান দিচ্ছে। এসময় অন্য হলের ছাত্র-ছাত্রীরাও সুফিয়া কামাল হলের গেটের সামনে এসে স্লোগান দিচ্ছে।
উতপ্ত সুফিয়া কামাল হল, ‘শেইম শেইম ছাত্রলীগ’ স্লোগান
ফাতেমা সাবা নামে এক আন্দোলনকারী ছাত্রী তার ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করেন। সেখানে পোস্টে তিনি লিখেছেন, কবি সুফিয়া কামলা হলের ছাত্রলীগ নেত্রী ইফাত জাহান এশা একজন জুনিয়র ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন।
এসময় হলের বিভিন্ন রুম থেকে ছাত্রীরা এনে এসে হলের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘শেইম শেইম ছাত্রলীগ’, ‘আমার বোনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারীরা সুফিয়া কামাল হলের সামনেও অবস্থান নিয়েছেন।
জানা যায়, সন্ধ্যার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ফিরলে আন্দোলনকারী ছাত্রীর ওপর চড়াও হন হল ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। এসময় হল সভাপতি এশার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা রুমে রুমে গিয়ে ছাত্রীদের মারধর করে। এক পর্যায়ে মোরশেদা বেগমের রগ কেটে দেয়। একইসাথে কয়েকজনের মাথা ফেটে দেয়। এরমধ্যে ঘটনা জানাজানি হলে হলের ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং চিকিৎসার জন্য আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন এবং এশাকে দায়ে হল থেকে বহিষ্কারের কথা জানান। একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটি এশাকে শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সভাপতি মেহেদী এমপির মারধর
এদিকে রাতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সভাপতি মেহেদী এমপি পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে পুলিশের সঙ্গে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করছেন। এসময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করলে পুলিশের সহযোগীতায় তিনি পলায়ন করেন।
সূত্র: পরিবর্তন ও অন্যান্য