অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে ও অন্তরালে নানা রকম ঘটনা ঘটছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস, হঠাৎ করেই সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার বিরোধী মারমুখি অবস্থান সব কিছুই হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আগামী দিনগুলোতে আরও নানান ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।
এর আগে অ্যানালাইসিস বিডির একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামীতে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। বিগত সাড়ে ৯ বছরে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক বিরোধীদল তথা বিএনপি-জামায়াতের ওপর দমন পীড়ন, জনপ্রিয় নেতাকর্মীদেরকে গুম-অপহরণ ও খুন, সাধারণ গুম, খুন, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, শেয়ারবাজার, ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক সেক্টর থেকে দুর্নীতি-লুটপাটের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দিশেহারা। ক্ষমতা হাত ছাড়া হলে ভবিষ্যত পরিণতি কী হবে সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার নেতাকর্মীদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই দল এবং নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব রক্ষায় যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা দেখছে না আওয়ামী লীগ।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে যত নাটকীয় ঘটনা ঘটছে সরকার সব কিছুই করছে আগামীতে ক্ষমতায় আসার জন্য।
তবে, এবার আর এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায় না আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে একতরফা নির্বাচন করে গায়ে যে কলঙ্কের দাগ লাগিয়েছে এবার আর সেই দাগ লাগাতে চায় না তারা। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো যেকোনো উপায়ে হোক বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে নিয়ে আসা।
সরকার মনে করছে, আগামীতে বিএনপিকে যদি বিরোধীদলের আসনে বসাতে পারে তাহলে নির্বাচন ও সংসদ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। আন্তর্জাতিক মহলও সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। তাই, শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে সরকার কারাবন্দি করেছে।
জানা গেছে, ১০০ আসন নিয়ে সমঝোতায় আসতে কারাগারে খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত সরকারের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না। প্রস্তাবে রাজি না হলে হয়তো কোনো সিস্টেম করে সরকার তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে নতুবা নির্বাচন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারেই থাকবে।
অপরদিকে, খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে বুঝানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদকে। জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে যেতে বিএনপির বড় একটি অংশ রাজি আছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার নতুন আরেকটি কৌশল হাতে নিয়েছে। সেটা হলো আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন। এতদিন বিরোধীতা করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা আজ সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন। জানা গেছে, সরকারের ইঙ্গিতেই তিনি এ কথা বলেছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিএনপি আগ থেকেই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলে শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতো প্রকাশ্যে কোনো জামেলা করবে না। কিন্তু ফলাফল চলে যাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে এই কৌশলটা বেশি কাজ করবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের এসব পরিকল্পনা জেনে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আগামীতে এরশাদের জাতীয় পার্টি আর বিরোধীদলের আসনে থাকছে না এটা নিশ্চিত হয়ে গেছেন এরশাদ। এমনকি আগামীতে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সরকারের শরিক হিসেবেও রাখতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এসব জানার পরই সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন এরশাদ। বিশেষ শনিবার চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ যা বলেছেন তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরণের কানাঘুষা চলছে।
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, এরশাদের টার্গেট হলো আগামীতে বিএনপি বিরোধীদলে আসে তাহলে এরশাদের জাতীয় পার্টি আবার সংকটে পড়বে। এখন থেকেই বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য দিয়ে এরশাদ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। যাতে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ নির্বাচন করে।