অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে বর্তমানে ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তের চেয়ে আদালতের নির্দেশনার গুরুত্বই বেশি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন আদালত যেটা নির্দেশ দিয়েছে সেটাই এখন সঠিক ইতিহাস। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক দেশের মানুষ সেটাই মানতে বাধ্য হচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও প্রতিষ্ঠিত তথ্য হচ্ছে , ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে যখন পাক-হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরীহ, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে, তখন তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধের লেশমাত্র হয়নি। আর মানুষ এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। ফলে বিনা প্রতিবাদে ও বিনা বাধায় ঝরে যায় মূল্যবান জীবন ও বিনষ্ট হয় অনেক সম্পদ। এমনি এক পরিস্থিতির মাঝে আওয়ামী নেতাদের বেশির ভাগই তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুর ফাঁদে ফেলে দিয়ে। আওয়ামী লীগের কথিত মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানও স্বেচ্ছায় পাকিস্তানিদের হাতে ধরা দিলেন। জাতির এই সঙ্কটকালীন মুহূর্তে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়াউর রহমান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশবাসী ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম যে শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে লেখা আছে তাই নয়, প্রতিবেশি দেশ ভারত কর্তৃকও জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আর শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও ভারত এ কথা মানতে নারাজ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পরম বন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দেন নি। ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক ও সমাজের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের এক সমাবেশে ইন্ধিরা গান্ধী বলেছিলেন- ‘The cry for independence arose after Sheikh Mujib was arrested and not before. He himself, so far as I know, has not asked for independence even now.’ অর্থাৎ স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পর, তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।
এরপর, ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমান ভারত সফরে গেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি তার সম্মানে আয়োজিত এক ভোজসভায় বলেছিলেন, ‘Your position is already assured in the annals of the history of your country as a brave fighter who was first to declare the independence of Bangladesh.Since you took over the reins of government in your country, you have earned wide respect both in Bangladesh and abroad as a leader dedicated to the progress of your country and the well being of your people.’ অর্থাৎ-একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাদানকারী হিসেবে আপনার মর্যাদা এরই মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে জাতীয় অগ্রগতি এবং জনকল্যাণে নিবেদিত একজন জননেতা হিসেবে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের বাইরে আপনি গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।
এমন অকাট্য সত্য ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও ২০০৯ সালের ২১ জুন আদালতকে বাধ্য করে একটি নির্দেশনা জারির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শেখ মুজিবের নাম অন্তর্ভূক্ত করে। বিচারপতি খায়রুল হকই শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করে আদেশ জারি করেছিলেন।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ইতিহাসে শেখ মুজিবের নাম না থাকলেও আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এটা ছিনতাই করেছে। তবে, এদেশের মানুষ মন থেকে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেনে নেয়নি।