বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য মুক্তি সব অর্থেই নিজেদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি এই পর্যায়ে হীতে বিপরীত হতে পারে বলেও মনে করছে ক্ষমতাসীন দলটি।
খালেদা জিয়ার জেলে থাকা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে তার মুক্তি চান না দলটির কোনও পর্যায়ের নেতা। যদিও প্রকাশ্যে তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার জেলে থাকা বা মুক্তির বিষয়টি পুরোটা আদালতের এখতিয়ার। এ নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত এক ডজন আওয়ামী লীগ নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলুক, তা চায় না আওয়ামী লীগ। অন্তত নির্বাচন পর্যন্ত খালেদাকে জেলে আটকে রাখার সব রাজনৈতিক কৌশল খুঁজছে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিললে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা। তাই মুক্তি ঠেকাতে রাজনৈতিক সব কৌশল প্রয়োগ করা হবে। তবে দৃষ্টিকটু হয়— এমন কিছু না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির নেতাদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়টি দেশের জনগণের মতো আমরাও ভুলে গেছি। তিনি কোথায় আছেন, দেশের মানুষ যেমন ভাবছে না, তেমনি আওয়ামী লীগও ভাবছে না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়া জেলে আছেন বলেই দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। দেশে আগুন সন্ত্রাস নেই, পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা বন্ধ আছে। খালেদা বের হলে এগুলো শুরু হওয়ার শঙ্কা আছে।’
আওয়ামী লীগ যা ভাবছে
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দল ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় খালেদা জিয়াকে যত দিন আটকে রাখা যায়, সে পথেই হাঁটছে।
সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া যেহেতু শাস্তির আওতায় এসে গেছেন এবং জেলে নেওয়া হয়ে গেছে— এখান থেকে সুফল ঘরে তুলতেই হবে। আর সুফল পাওয়া যাবে তখন, যখন নির্বাচন পর্যন্ত আটকে রাখা সম্ভব হবে। আর এই চেষ্টা আওয়ামী লীগ করেই যাবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা জানান, খালেদা জেলে যাওয়ার পর কোনও যুক্তিতেই তার মুক্তির বিষয়টি তাদের বোধগম্য হয় না। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন হীতে বিপরীত হবে সরকারের জন্য।’ ওই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির চেষ্টা বিএনপি করবে, মুক্তি ঠেকানোর চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।’ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই নিয়েই রাজনীতি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক নেতা বলেন, ‘সামনে নির্বাচন আসছে, বিএনপি খালেদার মুক্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনি মাঠ গুছিয়ে নেবে। এটা আওয়ামী লীগের জন্যে নির্বাচনি মাঠ গুছিয়ে নেওয়ার বড় সুযোগ।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন