অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরশাসক বলতে এতদিন কেবলমাত্র হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকেই বুঝানো হতো। ১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন কালে এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং সামরিক শাসন জারী করেন। তার ৮ বছরের স্বৈরশাসনকালে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ছিলো নির্বাসনে। এজন্য স্বৈরশাসন তকমাটি তার নামের সাথে পরিপূরক হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এখন আর এরশাদ বাংলাদেশের একমাত্র স্বৈরশাসক নন। তার পাশে যায়গা করে নিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বৈরশাসক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বের ১২৯ টি দেশে গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি এবং সুশাসনের অবস্থা নিয়ে এক সমীক্ষার পর জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ তাদের এ বছরের রিপোর্টে বলেছে, ‘বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না।’ এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ‘এবার নতুন করে যে ৫টি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে তাদের একটি হলো বাংলাদেশ।’
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে ১২৯ টি দেশের মধ্যে ৫৮ টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং ৭১ টি দেশকে গণতান্ত্রিক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে তাদের আগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ৭৪টি দেশে গণতান্ত্রিক এবং ৫৫টি দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এ ধরণের রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে।
একশো উনত্রিশটি দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে যে সূচক এই সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। যেখানে ভারতের অবস্থান ২৪ নম্বরে এবং শ্রীলংকা রয়েছে ৪১ নম্বরে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, “বিশ্বে গত ১২ বছরের মধ্যে গণতন্ত্র এবং সুশাসনের অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এক সময় বিশ্বের যেসব দেশকে মুক্ত বলে ভাবা হতো, সেসব দেশের সরকারও ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছে।”
রিপোর্টে বলা হয়, “বিশ্বে যে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে, সেটার চাইতে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে গণতান্ত্রিক দেশুগুলিতেও এখন নাগরিক অধিকার ক্রমশ খর্ব করা হচ্ছে এবং আইনের শাসন ভুলুন্ঠিত হচ্ছে।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এই সমীক্ষা চালানো হয় যেসব দেশের ওপর, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে পাঁচটি দেশের কথা—বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া এবং উগান্ডা।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এই পাঁচটি দেশ এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানছে না। এসব দেশে বহু বছর ধরেই গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছিল। এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই এটা ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয় রিপোর্টে।
বাংলাদেশে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। সেই কলঙ্কিত নির্বাচনে ১৫৩ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়। যা মোট নির্বাচনী আসনের অর্ধেকেরও বেশি। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সেই নির্বাচন বর্জন করেছিলো।
২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা নিজেকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত করেছেন। এই সময়ে তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়েছেন। বিতর্কিত বিচারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের ৬জন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর করেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে অবরুদ্ধ করেছেন। হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুম করেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এতদিন ধরে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা-গুমের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে আসছিলো। তার ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশেকে স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। পাশাপাশি শেখ হাসিনা পেয়েছেন স্বৈরশাসক তকমা।
আরো পড়ুন: ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ দেশের তালিকায় প্রবেশ করল বাংলাদেশ