জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনাদেশ স্থগিতের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানিকালে খালেদার আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনেই একতরফাভাবে রোববার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন প্রধান বিচারপতি। কেবলমাত্র দুদকের আইনজীবির বক্তব্য শুনেই এই স্থগিতাদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বুধবার (১৪ মার্চ) সকালে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে প্রধান বিচারপতির এমন আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়। পরবর্তিতে খালেদার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রমুখ।
শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্ট চারটি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করবো।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করে আসেন।’
তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সিপি ফাইল করতে রবিবার-সোমবার পর্যন্ত আমাদের সময় দেওয়া হোক। সে পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।’
এরপর আদালত বলেন, ‘ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রবিবারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে।’
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘আমাদের কথা আগে শোনেন। আমাদের বক্তব্য (আসামিপক্ষের) তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন। তখন শুনবো।’
জয়নুল আবেদীন তখন প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলে এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মতো চলতে দিন।’
এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না শুনেই তো আদেশ দিলেন।’
আদালত বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই।’ এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।’
এরপরই আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন আদালত।
সে মামলার শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না?’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনবো, কার কথা শুনবো না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে?’
গিয়াস উদ্দিন আবারও একটু উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’ জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দেবেন না।’
একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন।’ তখন অ্যাটর্নি কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় একদল আইনজীবী ‘দালাল দালাল’ বলতে বলতে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আটক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ আগামী রবিবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপিল আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকালে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনও সেখানেই আছেন।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের আবেদনের শুনানিকালে বক্তব্য না শুনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে তারা এ বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভে আইজনীবীরা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। এসময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন ও শীর্ষনিউজ