অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক হাজার মানুষকে ডেকে এনে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সেই ভাষণ প্রচার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে জনসভায় আসতে সরকার বাধ্য করেছে।
দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজনীতিতে সৃষ্ট চলমান সংকট নিরসনের বিষয়ে কথা বলবেন। কিন্তু, দেখা গেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ করে তিনি আগের মতোই পুরনো সেই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়েছেন।
এদিকে, বুধবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, আজকের জনসভার মাধ্যমে ৭ মার্চের ভাষণের চেতনা আমরা সবখানে ছড়িয়ে দেবো।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে ছড়িয়ে দেয়া ৭ মার্চের ভাষণের চেতনা দেশের কোন কোন অঞ্চলে গিয়ে পৌছেছে কিংবা এই ভাষণের চেতনায় জনগণ কতটুকু উজ্জীবিত হয়েছে সেটার হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে, ৭ মার্চের ভাষণের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে আজ রাস্তায় যৌন হয়রানি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা বাংলামটরে ভিকারুন্নেসার এক ছাত্রীকে মারাত্মকভাবে লাঞ্চনা ও যৌন হয়রানি করেছে। ওই ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে তারা হাত দিয়েছে। এমনকি তাকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা টানাহেছড়াও করেছে।
ওই ছাত্রী নিজেই তার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে এসব কথা উল্লেখ করেছেন।
এরপর শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চনা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আফরিনা আসাদ মেঘলা নামে এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীকে তারা খারাপ ভাষায় গালিগালাজও করেছে।
ওই ছাত্রী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, হল থেকে বের হয়ে কোন রিক্সা পাই নি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর পুরোটা রাস্তা জুড়ে ৭মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছেমতো টিজ করছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছে টিজ করছে।
বহু হয়রানির পর শহীদ মিনার থেকে রিক্সা নিয়ে শাহবাগ যাচ্ছি । এতেও রক্ষা নাই। চারুকলার সামনে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাইছে গায়ে। প্রায় আধাভেজা করে দিছে। যখন রাগ হচ্ছিলাম তখন তো আরেকজন রিক্সার পেছন থেকে চুল টেনে দৌড় দিছে । সিরিয়াসলি !!!
রিক্সা থেকে নামতে চাচ্ছিলাম জুতাবো ওইটাকে তাই। পাশের রিক্সার ভদ্রলোক খুব ভদ্রভাবে না করলো তাই রিক্সা থেকে নামিনি । গৌরবময় ৭ মার্চ সোনার ছেলেরা এত ভালভাবেই পালন করছে যে নিজের ক্যাম্পাসেই harass হতে হয়। ও হ্যা কেউ যেন আবার বলতে আসবেন না ,জানেনই তো আজ ঝামেলা হবে বের হতে গিয়েছেন কেন !!
এই ছাত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচনার ঝড় বইছে ৭ মার্চের ভাষণের চেতনা নিয়ে।
অনেকেই বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে তারা বছরের পর বছর খুন-হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, মাদকব্যবসা, ছিনতাই, টেন্ডার ও চাদাবাজি করে যাচ্ছে। শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দুইজন ছাত্রীকে হয়রানি করা এটা স্বাভাবিক বিষয়।
কেউ কেউ বলছেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের চেতনাকে ধারণ করে ১৯৭১ সালে বাংলার জনতা এদেশ থেকে নির্যাতনকারী ও ধর্ষক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করেছিলো। আর আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষন উদযাপনের দিনেই ছাত্রলীগ কর্তৃক নারীর শ্লীলতাহানি ঘটছে। ছাত্রলীগ যেনো স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের কাছে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি আর নির্যাতনের এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।