অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর রোববার হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষ হলেও বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও শহীদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ কোনো আদেশ দেননি। নিম্ন আদালত থেকে এ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
এ হিসেবে আগামী ১১ মার্চ নিম্ন আদালতের নথিপত্র হাইকোর্টে আসতে পারে। এ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারেই থাকতে হবে।
এদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিম্ন আদালতের নথিপত্রের কথা বলা হলেও সরকারের ওপর মহলের নির্দেশেই রোববার খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। যার কারণে রোববার জামিন শুনানির আগে বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের আচরণেও অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করার পর এর ওপর শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি এনায়েতুর রহিম দুদকের আইনজীবী খুরশেদ আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পর্যন্ত আমি জামিন দিতে পারি। খালেদা জিয়াকেও জামিন দেয়া যায়। আজকেই জামিন দিতে পারি। এক্ষেত্রে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কিনা। তখন খোরশেদ আলম বললেন, আমি জামিনের বিরোধীতা করছি না। তবে, কাগজটা দেখা একবার সুযোগ দিলে ভাল হয়। এরপর বিচারপতি এনায়েতুর রহিম রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন।
কিন্তু, রোববার দুপুরে বিচারপতি এনায়েতুর রহিম তার এজলাসে প্রবেশ করেই বিএনপির আইনজীবীদের দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যান। এসময় তিনি বলেন, এভাবে চাপ সৃষ্টি করে কাজ হয় না।
তার এই বক্তব্যের পরই বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয় যে, পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে। কারণ, বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া যায়। আজ আবার নথিপত্রের দরকার হলো কেন? হয়তো তার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ওপরের নির্দেশে পারছেন না।
জানা গেছে, রোববার শুনানির আগেও তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, দেশের রাজনীতি এখন অনেক অপরিপক্ক। রায় পক্ষে গেলে বলে ঐতিহাসিক আর বিপক্ষে গেলে বলে ফরমায়েশি।
এদিকে, আইনজ্ঞরা বলছেন, আপিল শুনানির জন্য নিম্ন আদালতের নথিপত্র যতটা দরকার, জামিন দেয়ার জন্য ততটা দরকার হয় না। আদালত চাইলে নিম্ন আদালতের নথিপত্র ছাড়াই একজন আসামিকে জামিন দিতে পারেন। এতে আইনের কোনো ধারা-উপধারা লঙ্ঘন হবে না। আসলে আদালত কিছু না। সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর এখন সব নির্ভর করে। সব কিছু সরকারের ইশারাতেই হচ্ছে।
আরেকটি সূত্রে অ্যানালাইসিস বিডি জানতে পেরেছে, খুব শিগগিরই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জামিন ঠেকাতে দুই বিচারপতি দ্বিধাবিভক্ত আদেশও দিতে পারেন। তখন আবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নতুন বেঞ্চ গঠন করে জামিন শুনানি হবে। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত লোক। তিনি খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
তারপর বিতর্ক এড়াতে আদালত তাকে জামিন দিলেও সরকার তাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটকে রাখবে। কুমিল্লার ৩ মামলায় খালেদা জিয়াকে আগেই গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরে অস্বীকার করেছেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে রোববার নির্দেশ দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তা তামিল করতে হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেও কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার আগেই কুমিল্লার মামলায় সরকার তাকে গ্রেফতার দেখাতে পারে। বিএনপি নেতারাও এমন আশঙ্কা করছেন।
আরেকটি সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে যে পর্যন্ত সমাঝোতায় না আসবে সেই পর্যন্ত সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবে না।