অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনে বড় ধরণের রদবদল করেছে সরকার। এর মধ্যে ২৯ জেলার পুলিশ সুপার ও ২২ জেলার জেলা প্রশাসককে রদবদল করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোর, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁওকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ অথবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত) মো. আশরাফ আলী ভুঁঞা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর বগুড়া হলো জামায়াত-শিবিরের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। তাই তাকে বগুড়ার পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এরপর ঢাকার এনটিএমসির এসপি আবদুল মান্নান মিয়াও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর গাইবান্ধা জেলা দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াত-শিবিরের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। তাই সরকার আব্দুল মান্নান মিঞাকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল্লাহ ও পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। তারা বর্তমানেও সরকারের খুব আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। আর রাজশাহী জেলা ও মহানগর জামায়াত-বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। তাই মো. শহীদুল্লাহকে পুলিশ সুপার ও সাইফুল ইসলামকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ডিসি করা হয়েছে।
এছাড়া ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের সঙ্গে তার বেশ ভাল সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিকে নীলফামারী জেলা আগ থেকেই জামায়াত-শিবিরের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। আসাদুজ্জমান নুর তার মিশন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই আশরাফ হোসেনকে নীলফামারীর এসপি হিসেবে বদলি করার সুপারিশ করেছেন। তার আবদারের আলোকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাকে নীলফামারীর পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করেছে।
এরপর ২২ জেলার ডিসি পদেও রদবদল করেছে সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ডিসি আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও খুব আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। আর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার রাজধানী ঢাকাতে বিএনপি-জামায়াতকে কোনো আন্দোলন করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই পুলিশ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে শক্ত হাতে প্রতিহত করার লক্ষ্যে আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানকে ঢাকার ডিসি করা হয়েছে।
তারপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ঠাকুরগাঁও, যশোর ও দিনাজপুর জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনী মাঠ দখলের লক্ষ্যে সরকার একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিদেরকে ওই সব জেলার ডিসি হিসেবে বদলি করেছে। এদের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব আবুল ফজল মীরকে কুমিল্লায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনকে সাতক্ষীরায়, ফরিদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুরকে দিনাজপুরে, জননিরাপত্তা বিভাগের সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনকে চট্টগ্রামে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুমেরী জামানকে সিলেটে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. আখতারুজ্জামানকে ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি করা হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব কামাল হোসেনকে কক্সবাজারে, স্থানীয় সরকার বিভাগে সংযুক্ত উপসচিব সরোজ কুমার নাথকে ঝিনাইদহে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ক্যান্টনমেন্ট নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবদুল কাদেরকে রাজশাহীর ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি আবদুল আওয়ালকে যশোরে বদলি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এক সময় ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন পদে কর্মরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তিনি শেখ হাসিনার বিশ্বস্থ মানুষদের মধ্যে একজন। এজন্য আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাবেদ পাটোয়ারীকে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর পুলিশ প্রশাসনে এখন যে রদবদল হচ্ছে সেটাও জাবেদ পাটোয়ারির পরামর্শেই হচ্ছে।
সরকার এসব রদবদলকে রুটিন ওয়ার্ক বললেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার বড় একটি টার্গেট নিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব রদবদল করছে। নির্বাচনে বিজয়ী হতে সরকার এখন থেকেই প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে সাজাচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সাজানো এই প্রশাসনের অধীনে যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে বড় ধরণের ভুল হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও সাজানো প্রশাসনকে বদল করেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।