জনপ্রশাসনের নির্দেশ মানতে চাইছেন না মাঠ প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তারা। বদলি করা হলেও পুরনো কর্মস্থল ছেড়ে যেতে তারা গড়িমসি করছেন। অনেক কর্মকর্তা বদলি ঠেকাতে তদবির করছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন থেকে সতর্ক করে একাধিক আদেশ জারি করা হয়েছে। তারপরেও অসমাপ্ত (পেনডিং) কাজ দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তা দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন পুরনো কর্মস্থলে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পোস্টিং অ্যান্ড ডেপুটেশন-এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদেশের পর যদি কেউ বদলি করা কর্মস্থলে না যান তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি ফেনী জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে মৌসুমী বাইন হিরাকে বদলি করা হয় ফেনী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু নতুন কর্মস্থলে যোগদানে অনীহা দেখান তিনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের (মাঠ প্রশাসন-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সই করা আদেশে বলা হয়, ‘অদ্যাবধি বদলি করা স্থানে যোগদান করেননি।’ গত ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যোগদান না করলে ওইদিন বিকাল থেকে তাকে অবমুক্ত বলে গণ্য করার কথা।
গত ১১ জানুয়ারি ‘মাল্টিলেন টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলি প্রজেক্ট’-এর সহকারী পরিচালক রবিউল হাসানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান করেননি। এ অবস্থায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের জন্য আদেশ জারি করে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘অদ্যাবধি বদলি করা স্থানে যোগদান করেননি। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যোগদান না করলে ওইদিন বিকাল থেকে তিনি অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।’
এদিকে, বারবার বদলির ও সতর্কীকরণ আদেশ দেওয়া হলেও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল মোহাম্মদ রাসেদ নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। গত ৩১ জানুয়ারি তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বদলি করা স্থানে যোগদান না করায় ওইদিনই তাকে সতর্ক করে আদেশ জারি করে মন্ত্রণলায়। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন।
একইভাবে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী অফিসার জামাল উদ্দীনকে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হলেও বদলি করা স্থানে যোগদান করেননি। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালকে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি বদলি করা স্থানে যোগদান করেননি। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসানকে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করেননি। এ অবস্থায় এসব কর্মকর্তাকে সতর্ক করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সই করা আদেশে বলা হয়, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যোগদান না করলে ওইদিন বিকাল থেকে এসব কর্মকর্তা অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।
বদলি করা নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করায় মাঠ প্রশাসনের (শাখা-২) গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদেশে একসঙ্গে ছয় কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়। তবে সতর্ক করার পরও অধিকাংশ কর্মকর্তাই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
নরসিংদীর রেভিনিউ ডেপুটি কালেকটর মো. মোস্তফা মনোয়ারকে গত বছরের ২৯ নভেম্বর, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শারমিন সুলতানা ও ফরিদুপরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আর এম সেলিম শাহনেওয়াজকে গত ১১ জানুয়ারি এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আফরোজা আক্তার রিবাকে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এছাড়া ওই আদেশে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা খানমকে গত ১১ জানুয়ারি এবং কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদাকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখায় ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু গত ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
যোগদান না করার কারণ জানতে চাইলে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন বাংলা ট্রিবউনকে বলেন, ‘পেনডিং কাজ থাকায় নির্ধারিত সময়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা হয়নি।’ সর্বশেষ আদেশে সতর্ক করার পরেও পুরাতন কর্মস্থলে কেন জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আদেশ স্থগিত হয়েছে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন