আর্থিক খাতে অনিয়মের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এখনই অবসরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, ‘আপনি ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন আপনি রক্তক্ষরণ কনটিনিউ করবেন? আমাদের বাঁচান, দেশকে বাঁচান, জাতিকে বাঁচান। ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়েট করার দরকার কী? আপনি আজই অবসরে চলে যান।’ রবিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার সংসদের বৈঠকে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমের পর জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সূত্রপাত করেন। তিনি শেয়ার বাজারে ধস নিয়ে কথা বলেন। পরে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু গোটা আর্থিক খাত নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থপাচার নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রথম পানামা পেপারসে নাম এলো, অর্থমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নিলেন না। এরপর এলো প্যারাডাইস পেপারস নামসহ অনেক ব্যবসায়ীর নাম। তাতেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। ব্যাংক খাতে চলছে আতঙ্ক উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি। এই হচ্ছে মানি মার্কেটের অবস্থা।’
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘পানামা পেপার কেলেঙ্কারির জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আমাদের ২৭জনের নাম এসেছে। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কত টাকা পাচার হয়েছে, তারও কোনও হিসাব অর্থমন্ত্রী সংসদে দেননি। মনে হয় তিনি বাধ্যও নন। মাঝে মাঝে বলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনও টাকা হলো? এর দায়িত্ব আপনাকে (অর্থমন্ত্রীকে) নিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে আজই অবসরে যান। দেশ ও জাতিকে পরিত্রাণ দিন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারসে কোনও রাজনীতিবিদের নাম আসেনি। যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় কিসের? সুশীল সমাজ অনেক কথা বলে। আমাদের নামে (রাজনীতিবিদদের) কোনও অ্যাকাউন্ট বের করতে পারেনি। তাদের নামেই বের হয়েছে।’
জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘সোনালী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের রিফাইনেন্সিং দরকার। দুই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। গত কয়েক বছরে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কার টাকা এটা। এটা গৌরি সেনের টাকা নয়। ১৬ কোটি মানুষের টাকা। কীভাবে দিলেন, তার কোনও উত্তর নেই।’ তিনি বলেন, ‘সব ব্যাংকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ছোট বেলায় শুনতাম, যার হয় যক্ষা, তার নাই রক্ষা। অর্থনীতির যক্ষা হয়েছে, অর্থনীতির কোনও রক্ষা নাই। বাঁচাতে হবে। অর্থনীতির রক্তক্ষরণের কারণে দেশের রক্তক্ষরণ হচ্ছে, জাতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কর্মসংস্থান না হলে অর্থনীতি বেগবান হবে কীভাবে?
শেয়ার বাজারে ধ্বসের প্রসঙ্গ টেনে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ঢাকা স্টক মার্কেট স্মরণকালের বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে। প্রত্যেক শেয়ার নিম্নমুখী। এই মুহূর্তে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে স্টক একচেঞ্জ তার ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করার ষড়যন্ত্র করছে। পাবলিক লিমিডেট কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে হলে প্রথম লিস্টিং করতে হবে। সামনে নির্বাচন সেই সময় এটা করা হচ্ছে। তিন হাজার কোটি টাকা কারা লুটপাট করছে? শেয়ার নিয়ে কারচুপি চলছে। একদল ইন্ডিয়া ঘুরে আসছে, আরেক দল চায়না ঘুরে আসছে।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন