চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণে জড়িতরা ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রলীগের পরিচয়ে চলে, এমন একজনের নেতৃত্বে নগরীর সিআরবি এলাকায় প্রতিপক্ষের উপর হামলা করতে যাচ্ছিল মোট ১০ জন। যাবার পথে পুলিশের মুখোমুখি হলে যুবলীগ কর্মী খোকন গুলি ছুঁড়ে।
নগরীর ৮ নম্বর ষোলশহর ওয়ার্ডের বিতর্কিত দুই যুবলীগ নেতা ঘটনায় জড়িতদের ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউই এসব বিষয়ে সরাসরি মুখে খোলেননি।
জানতে চাইলে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি, তারা বড় ধরনের কোন ধর্তব্য অপরাধ ঘটানোর জন্য যাচ্ছিল। সেটা হতে পারে কাউকে গুলি করে দেওয়া কিংবা ভাংচুরও হতে পারে। পুলিশের সামনে যখন পড়ে যায় তখন ধরা পড়ে যাবার ভয়ে গুলি করে। যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে, তারাও জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন।
সিআরবি এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে কাউকে আক্রমণের জন্য যাচ্ছিল, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এই ধরনের তথ্য এসেছে। যাচাইবাছাই করে দেখছি।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার দুই নম্বর গেইট এলাকায় পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ পাঁচলাইশ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল মালেক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মো.আব্দুল হাকিম অভি (১৯) নামে একজনকে আটক করেন। এরপর রাতে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জোবায়ের হোসেন প্রত্যয় (১৭) এবং মাঈনুদ্দিন ফরিদ প্রকাশ রাকিব (১৭) নামে আরও দুজনকে আটক করে পুলিশ।
সূত্রমতে, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে প্রত্যয় এবার নগরীর কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের বাড়ি নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায়। বাসা মুরাদপুর জলিল বিল্ডিং গলিতে।
রাকিবও নগরীর নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বাবা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আ ন ম ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুরা দোভাষীবাজারে তাদের বাড়ি। বাসা নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর সড়কে।
অভি হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক মো.ইউনূসের ছেলে। নগরীর চশমাহিলের মেয়র গলিতে তাদের বাসা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি বলেন, সিভিল এবং ইউনিফর্ম পড়া মিলিয়ে ১০ জনের টিম ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল। তিনটি মোটর সাইকেলে করে ১০ জন দুই নম্বর গেইটের মোড় অতিক্রম করে মুরাদপুরের দিকে যাচ্ছিল। কর্তব্যরত পুলিশের সন্দেহ হলে সেটি থামার সংকেত দেন তারা। এসময় একজন গুলি ছুঁড়ে।
‘গুলিবর্ষণের পর একটি মোটর সাইকেল ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে আরেকটি মোটর সাইকেল কয়েক গজ দূরে ফেলে যায়। এসময় হাকিমকে পুলিশ ধরে ফেলে। আরেকটি মোটর সাইকেল মুরাদপুর এলাকায় পার্ক করে তারা পালিয়ে যায়। পরে সেটিও আমরা উদ্ধার করেছি। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা ও এক রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ’ বলেন ওসি
সূত্রমতে, নগরীর সিআরবি এলাকায় এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী একটি গ্রুপের মারধরের শিকার হন ঘটনায় জড়িত ১০ জনের একজন। মারধরের বিচার দিতে গিয়ে সে আরেক দফা অপমানের শিকার হয়। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে প্রতিপক্ষের উপর হামলার জন্য সে বাকিদের জড়ো করে যাচ্ছিল সিআরবি এলাকায়। মূলত ছাত্রলীগ নামধারী ওই তরুণই ঘটনার নেতৃত্বদাতা।
ছাত্রলীগের রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমইএস কলেজে পড়ালেখা না করলেও ওই তরুণ এই কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয়। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তবে নগর, কলেজ কিংবা ওয়ার্ডভিত্তিক ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে তার নাম নেই।
সূত্রমতে, যে খোকন গুলি করেছে, সে জিইসি-ষোলশহর এলাকায় যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২৪ বছর বয়সী খোকনের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা আছে।
পুলিশের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে খোকনের নাম আছে। কথিত ছাত্রলীগ নেতার নামও আছে।
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১০ জনের সবার নাম-ঠিকানা সবই আছে। তবে গ্রেফতার এবং তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে আমরা পলাতক কারও নাম বলতে পারব না।
আটক তিজনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। মহানগর হাকিম আল ইমরান অভিকে কারাগারে এবং বাকি দুজনকে বয়স বিবেচনায় সেফহোমে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর।
সূত্র: বাংলানিউজ