মুসাফির রাফি
বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষার ইতিহাসে এবার এক অভুতপূর্ব ঘটনা ঘটলো। আমরা খেলার মাঠে ধারাবাহিক অনেক পারফরম্যান্স দেখেছি। এবার পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে দেখলাম। এই সরকার ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখালো এবার। আল্লাহর রহমতে, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এমন একটি বিষয়ের পরীক্ষা এবার হয়নি, যার প্রশ্নপত্র আগে থেকে ফাঁস হয়নি।
শিক্ষা সচিব বা শিক্ষামন্ত্রীর অনেক সুন্দর সুন্দর কথাবার্তাও এই সমস্যার প্রেক্ষিতে আমরা শুনতে ও জানতে পারলাম। মোটের উপর যেটা বুঝলাম, সেটা হলো ওনারা বড়ই অসহায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই।
এরই মধ্যে হঠাৎ করে জানতে পারলাম, পরীক্ষার দিনগুলোতে ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা। বেশ ধাক্কা খেলাম প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার সরকারী সমাধানের এই আইডিয়াটা শুনে। এ যেন মাথা ব্যথার কারনে মাথা কেটে ফেলার মত চিন্তা।
আচ্ছা বলুন তো দেখি, এই বছর পরীক্ষা দিচ্ছে সব মিলিয়ে কতজন ছাত্রছাত্রী। আমি যতদূর জানি বর্তমানে ৮ কোটি মানুষ মোবাইল ডাটায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাহলে কয়েক লাখ ছাত্রছাত্রীর একটি সংকটের খেসারত কেন কোটি কোটি মানুষকে দিতে হবে?
বাংলাদেশ একটি চমৎকার দেশ। এখানে সবচেয়ে বেশী যেই শব্দগুলো শোনা যায় সেগুলো হলো জনগনের শাসন, গনতন্ত্র, আইনের শাসন ইত্যাদি। অথচ এদেশে যেভাবে জনগনকে অবমুল্যায়ন করা হয়, জনগনকে উঠতে বসতে যেভাবে বানরের মত নাচানো হয়, জনগনকে যেভাবে পদতলে পিষ্ঠ করা হয় কিংবা যেভাবে মানবাধিকারের বারোটা বাজানো হয়, পৃথিবীতে আর কোথাও তা করা হয়না।
ধরুন, সরকারের এই ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্তের কথাই যদি বিবেচনা করা যায়, এটা কি জনবান্ধব কোন পদক্ষেপ? যারা টাকা দিয়ে ইন্টারনেট কেনে, তাদের দোষ কি? মোবাইল কোম্পানীগুলো কি নির্দিষ্ট কিছু দিনে ইন্টারনেটের গতি কমানোর ক্ষতিপূরন হিসেবে জনতাকে তাদের টাকা ফেরত দিবে? আর যেখানে সরকারী এক ধরনের অসাধু কর্মকর্তারা যোগসাজশে প্রশ্ন ফাঁস করে বেড়ান, যেখানে প্রশাসনের একটি অংশ রক্ষাকবচ হিসেবে তাদেরকে প্রোটেকশন দেন, আর যেখানে সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতারা সরাসরি এই প্রশ্নপত্র বিক্রির ভাগ বাটোয়ারা পায়, সেখানে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে কি সমাধান হবে?
পুলিশ এত আসামী ধরতে পারে, জংগী নিধন করতে পারে, বিরোধীদলগুলোকে দৌড়ের উপর রাখতে পারে সেখানে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে ধরতে পারবেনা- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
আসলে এগুলো সবই সরকারের নাটক। তারা আসলে প্রশ্নপত্র ফাঁস নামক ক্যান্সারের চিকিৎসাই করাতে চায়না। তাই আবোল তাবোল কথা ভেবে, এলোমেলো সমাধান দিয়ে সমস্যাকে এড়িয়ে যেতে চায়, সত্যিকারের অপরাধীদেরকে আড়াল করতে চায়।
আমি বলি কি, এভাবে জনগনকে আর কতদিন বোকা বানাবেন? জনগনের ভোগান্তি বাড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ আর কতদিন উসুল করবেন? তার চেয়ে বরং আপনারই পকেটের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীগুলোকে বের করে আনুন। তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন।
মুরোদ থাকলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকান। আর তা না থাকলে বসে বসে মুড়ি খান। তারপরও আল্লাহর ওয়াস্তে জনগনের সাথে গেম খেলা বন্ধ করুন। ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে কি প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা যাবে? সর্ষের মধ্যে ভুত থাকলে ভুতটা তাড়াবেন কিভাবে? তার চেয়ে আমি বরং সরকারকে ভিন্ন পরামর্শ দিতে চাই।
আপনারা দয়া করে পরীক্ষা দেয়ার সিস্টেমটাই উঠিয়ে দেন। তাতে ছাত্রছাত্রী যেমন খুশী হবে তেমনি আপনাদেরও লাভ হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়তো তখন বন্ধ হবে। কারন পরীক্ষাই যদি না হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস কোথা থেকে হবে?
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মহোদয় বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন কি!!
অ্যানালাইসিস বিডি