বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আদালত রায় দেওয়ার আগে থেকেই ক্ষমতাসীনরা বলে বেড়াচ্ছে, আমার জেল হবে। যেন বিচারক নন, রায় ঠিক করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরাই। আমাকে রাজনীতির ময়দান ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় প্রসঙ্গে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকার গুলশানে নিজ কার্যালয়ে তিনি এসব বলেন। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রায়ের দিন ধার্য হওয়া ওই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দলীয়করণ, ভীতিপ্রদর্শন ও অপকৌশলের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। হেনস্তা ও অপমানের ভয়ে নাগরিক সমাজ স্বাধীন মতপ্রকাশের সাহস হারিয়ে ফেলেছে। দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। বাংলাদেশটাকে আজ পরিণত করা হয়েছে বৃহত্তর কারাগারে। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে জেলগুলো ভরে ফেলা হয়েছে।’
খালেদা জিয়া জোর দিয়ে দাবি করেন, ‘ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এই মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমার আইনজীবীরা আদালতে তা প্রমাণ করেছেন। জিয়া অরফানেজের একটি টাকাও তছরুপ হয়নি। সব টাকা প্রতিষ্ঠানের নামেই ব্যাংকে জমা আছে। এখন সুদ-আসলে সেই টাকা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। এ মিথ্যা মামলায় ন্যায়বিচার হলে আমার কিছুই হবে না। আমি কোনও দুর্নীতি করিনি। ইনশাল্লাহ বেকসুর খালাস পাবো।’
এই জালিয়াতিপূর্ণ মামলা যারা দায়ের করেছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য খালেদা জিয়ার। তার ভাষ্য, ‘যারা এই মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে তাদেরও সাজা হওয়া উচিত। শাসক মহলকে তুষ্ট করার জন্য অন্যরকম কোনও রায় হলে তা কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি। আমাকে জেল বা সাজার ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমি মাথা নত করবে না। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে পিছু হটবো না।’
আগামীতে অনেক ফাঁদ পাতা ও ষড়যন্ত্র হবে উল্লেখ করে সবাইকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে বলেছেন খালেদা জিয়া। তার কথায়, ‘বুঝে-শুনে কাজ করবেন। এই দেশ আমাদের সবার। কোনও ব্যক্তি বা দলের নয়। আমরা সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্য চাই না। আমরা শান্তি চাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রহসন নয়, সত্যিকারের নির্বাচন চায়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এ নির্বাচন কাউকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ ও কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এটি হবে জনগণের রায় নিয়ে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্বাচন। তেমন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি বলেই আজ আমাদের ওপর এত জুলুম-নির্যাতন, এত মিথ্যা মামলা। এখনও আমরা আশা করে বসে আছি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আওয়ামী লীগেও অনেকে আছেন যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন। তাদের প্রতিও আমার আহ্বান, সবশ্রেণির মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন। আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সম্ভাবনাময় দেশ রেখে যাই।’
এর আগে বিকাল ৫টা ৬ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আয়োজন সঞ্চালনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন