অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
- আমি যেখানেই থাকি না কেন আপনাদের সঙ্গেই আছি, থাকব।
- যে কোনো কর্মসূচি ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবেন।
- নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায়, সঠিক রায় দেয়ার ক্ষমতা এখন বিচারকদের নেই।
- কোনো অপরাধ আমি করিনি, তারপরও গায়ের জোরে বিচার করতে চাইছে সরকার।
- তারেক রহমানের মামলায় সঠিক রায় দেয়ায় এক বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
- সরকারের বিরুদ্ধে বলে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকেও দেশ ছাড়তে হয়েছে।
- নৌকা এতোটাই ডুবেছে যে এক বছর আগে থেকে ভোট চাইতে হচ্ছে।
- হিন্দুরা আর নৌকার কাছে যেতে চায় না।
- অস্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
- ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
- ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
- সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, তারা মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
- ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, নিম্ন আদালত সরকারের পুরো কব্জায়। কতটা কব্জায় তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা সত্য, সঠিক রায় দেয়ার ক্ষমতা এখন তাদের (বিচারকদের) নেই। শনিবার সকালে হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কারাগারে যাওয়ার আশঙ্কাকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন আপনাদের সঙ্গেই থাকব, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকব। আমাকে ভয় দেখিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। যে কোনো কর্মসূচি ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, তারেক রহমানের মামলায় সঠিক রায় দেয়ার কারণে নিম্ন আদালতের এক বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বলে রেহাই পাননি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তাকেও দেশ ছাড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে আজ বিচার কোথায়? কোনো অপরাধ আমি করিনি। তারপরও গায়ের জোরে বিচার করতে চাইছে সরকার। পিপি সাহেবকে দিয়ে এমনভাবে কথা বলতে বাধ্য করা হয়, যাতে তার স্বর শুনলে বোঝা যায়, শক্তিটা আসছে কোথা থেকে!
খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। কিন্তু এক বছর আগে কেন ভোট চাইছে আওয়ামী লীগ। আসলে নৌকা এতোটাই ডুবেছে যে এক বছর আগে তা টেনে তোলা লাগছে। বিএনপি মাটি ও মানুষের দল। সবেচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় দল। আওয়ামী লীগ পুরোনো দল হতে পারে কিন্তু জনপ্রিয় নয়। তাই এক বছর আগে থেকে ভোট চাইতে হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন আরো বলেন, আজকে যারা গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসার দাবী করছে অস্ত্রের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবাইকে মিথ্যা কথা স্বীকার করায়।
খালেদা জিয়া বলেন, গুম খুন আগের মতো বেড়ে গেছে। তাই বিদেশীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আসছেন না। দেশে যারা আছেন তারাও বিনিয়োগ করছে না যদি টাকাগুলো লস হয়।
তিনি বলেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। এতে আসামী করা হয়েছে সাড়ে ১৮ লাখ মানুষকে। এমনো নেতাকর্মী আছে যাদের নামে শতাধিক মামলা রয়েছে। আজ আমাদের মহিলা নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন তাদের মহিলারা রাস্তায় এসে আন্দোলন করেছে। সেখানে রান্নাবান্না করেছে। পুলিশ ধরতে আসলে হাতে কামড় দিয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সারাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, বাড়িঘর দখল করেছে, মন্দির ভাঙ্গছে, ব্যবসা বাণিজ্য লুটপাট করছে। হিন্দুরা আর নৌকার কাছে যেতে চায় না।
লা মেরিডিয়ানে সভা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা এখানে(হোটেলে) সভা করতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম সোহারওয়ার্দী উদ্যান বা মহানগর নাট্যমঞ্চের মতো জায়গাগুলোতে। আমাদের দেয়া হয়নি। কেন আজ এখন বিএনপিকে সভা করতে দেয়নি। কারণ বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল এবং জনপ্রিয় দল।
এর আগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাস্থল রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে থেকে দলের নেতাকর্মীরা ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টা ৩ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সভাস্থলে উপস্থিত হন। এর ১৫ মিনিট পর হোটেলের সামনে থেকে চারজন নেতাকর্মীকে গোয়েন্দা পুলিশ একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তবে আটক নেতাকর্মীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
তার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেছেন, পত্রপত্রিকা ও আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী গত ৯ বছরে ১২ হাজার ৮৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন প্রণীত প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে বিরাজমান মানবাধিকার পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও কারসাজির মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একটি প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়া বর্তমান সরকার তাদের দুঃশাসনের ৯টি বছর ইতোমধ্যে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
ভোটে যেতে ৬ শর্ত
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সেনা মোতায়েনসহ ছয়টি শর্ত দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি শর্তগুলো তুলে ধরেন।
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার দেয়া শর্তগুলো হলো-
১. ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
২. জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৩. ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
৪. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
৫. ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
৬. যন্ত্রে ভোটের জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
সভায় ছয় শর্ত দেয়ার পর খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে জানতে চান তারা এর সঙ্গে একমত কি না। এ সময় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উচ্চ স্বরে বলেন একমত।