মুসাফির রাফি
খুব মনোযোগ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মেজবাহ’র একটি বক্তব্য শুনলাম। তিনি তার বক্তব্যে দাবী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন নাকি একটা উচ্চতর মাদ্রাসা হয়ে গেছে। আরো দাবী করেছেন, জেনারেল লাইনে পড়া ওনার ছেলে মেয়েরা নাকি এখন নাকি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়না। একই বক্তব্যে তিনি বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে নাকি অন্যায্য সুবিধা দেয়া হয়। তিনি এও বলেছেন, মাদ্রাসায় পরীক্ষায় ছাত্ররা বাড়তি নাম্বার পাওয়ায় তারা ভর্তি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তার এই বক্তব্য শুনার পর আমার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হলো আমি রীতিমত বিস্মিত, বাকহত- যেন আমার মাথার উপর বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘খ’ এবং ‘ঘ’ বিভাগে মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সম্ভবত এই জন্যই মেজবাহ স্যারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেননা তিনি যা বলেছেন তা বাস্তবতার চিত্র থেকে শুধু আলাদাই নয় বরং পুরোপুরি বিপরীত।
আমরা গত কয়েক বছরের সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জেনেছি যে, শুধু মাদ্রাসার ছাত্ররাই নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভর্তি পরীক্ষায় জেনারেল লাইন থেকে আসা অনেক এ প্লাস পাওয়া ছাত্রছাত্রীও ইংরেজীতে ফেল করে যাচ্ছে। এরা যদি জেনারেল লাইনে পড়েও মাদ্রাসার ছাত্রদের থেকে ইংরেজীতে কম পটু হয়, তাহলে তার জন্য মাদ্রাসার ছাত্ররা কি দায়ী? অহেতুক মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে কেন এই মেজবাহ স্যারেরা কথা শোনাবেন?
আমরা সবাই জানি, মাদ্রাসা থেকে আসা ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল সাবজেক্টে পড়ার সুযোগই পাননা। এমনভাবে নিয়ম করা হয়েছে যে, মাদ্রাসার ছাত্ররা ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে ভাল ফলাফল করলেও তাদের পছন্দসই সাবজেক্ট তারা নিতে পারেন না। অনেকগুলো বিভাগই মাদ্রাসার ছাত্রদের ভর্তির বিষয়ে বার বার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
এবারের ভর্তি ফরম জমা দেয়ার সময় নেকাব পড়া এমনকি হিজাব করা মেয়েরাও ছবি দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন মর্মে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছিল। সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ইসলামপন্থীদের আখড়ায় পরিনত না হয় সেই জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল এবং মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা নিজেরাই অনেকগুলো ছাত্রীর ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন।
মেজবাহ স্যার তো ভাল গবেষক। তিনি তো ইচ্ছে করলেই একেকটা ক্লাসে ঢুকে আনুপাতিক হারটি বের করে ফেলতে পারেন। বিশেষ করে একেকটি ক্লাসে জেনারেল লাইনে আসা ছাত্র কয়জন আর মাদ্রাসা থেকে আসা ছাত্র কয়জন। সেই আনুপাতিক হার পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে যে আসলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর মাদ্রাসা হয়ে উঠছে কিনা কিংবা মাদ্রাসার ছাত্ররা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে কিনা।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আক্রমন এবং হামলার ঘটনায় পুরোই গরম। মেজবাহ স্যার ইচ্ছে করলে এটাও গবেষনা করে বের করতে পারেন, আজ অবধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার জন্য যারা দায়ী কিংবা যাদের নামে অভিযোগ এসেছে কিংবা পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তার মধ্যে শতকরা কতজন মাদ্রাসা থেকে এসেছে?
আমার ধারনা, মেজবাহ স্যারের মত গবেষকরা যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষনা করতে পারেন তাহলে তাদের ফাইন্ডিংসেই প্রমানীত হবে যে তারা কতটা মিথ্যা কথা বলেছেন।
আসলে সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা মাদ্রাসা নিয়েও নয়। সমস্যা ইসলাম নিয়ে। যদি পারতেন, যদি জনগনের পাল্টা রিএকশনের ভয় বা আশংকা না থাকতো, তাহলে এই মেজবাহ স্যারেরা হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার সুযোগটাই বাতিল করে দিতেন।
মেজবাহ স্যারের সাম্প্রতিক ভাষন প্রমান করে তিনি শিক্ষক হিসেবে সকল ছাত্রকে সমানভাবে মুল্যায়ন করতে পারেননি। তার বক্তব্য প্রমান করে যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রাখেননা। তার বক্তব্য এটাও প্রমান করে যে, মেধা বা প্রতিভার ভিত্তিতে যোগ্যতর হলেও তার কাছে কোন দাম নেই, যদি সেই ছাত্র মাদ্রাসার ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়।
যত দোষ নন্দ ঘোষের মত অহেতুক মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে হেয় করা, তাদেরকে অপরাধী বানানোর মিথ্যা প্রপাগান্ডা থেকে এইসব শিক্ষক নামের একপেশে ব্যক্তিগুলো কবে সরে আসবেন কে জানে…..।