মুসাফির রাফি
ছোট বেলা থেকেই শুনেছি, ইহুদী ও মুশরিকদের মধ্যে নাকি আত্মার মিল রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা আল মায়েদার ৫১ নং আয়াতে বলেছেন, “তোমরা ইহুদী-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করোনা। তারা একজন আরেকজনের বন্ধু। যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবে তারা তাদেরই দলভুক্ত হিসেবে গন্য হবে।”
বর্তমান সময়ে পরগাছা, সন্ত্রাসী ও জংগী মানসিকতার ইহুদীরা ফিলিস্তিনি মুসলিম জনগনের উপরে ভয়াবহ গনহত্যা, জুলুম ও নির্যাতন চালাচ্ছে। কথায় কথায় ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনি জনগনকে পাখির মত গুলি করে মারছে। অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নারী পুরুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মুসলমানদেরকে ইসলামের প্রথম কিবলা বায়তুল মাকদিসে নামাজ পড়তে বাধা দেয়া হচ্ছে।
বায়তুল মাকদিসে নামাজ পড়তে না দেয়া আর রংহেডেড মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বানানোর অন্যায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়েই ইসরাইলী সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের উপর নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়েছে। শহীদ হয়েছেন পঙ্গু ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধা ইবরাহীম আবু থুরাইয়াসহ অনেকে। যুবক- যুবতী এবং কিশোর কিশোরীকেও গ্রেফতার করে ইসরাইলী ডিটেনশন সেন্টারে এখনো পর্যন্ত বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে।
রক্তের হোলি খেলা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অনেক দেশেই যেতে পারেন না। কেউ তাকে ডাকেনা। গেলেও তিনি তীব্র প্রতিরোধ আর প্রতিবাদে কোনঠাসা হয়ে পড়েন।
অতি সম্প্রতি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ঘুরে গেলেন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখানে বিমান থেকে নেতানিয়াহুর অবতরনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে ছুটে গিয়ে এই ইহুদী বর্বর নেতাকে জড়িয়ে ধরলেন তাতে মনে হলো সামথিং ইজ ভেরি রং। নিজের আত্মার আত্মীয় না হলে এভাবে কাউকে আপন করে নেয়া যায়না।
নরেন্দ্র মোদির হাতও মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত। গুজরাটে কয়েক হাজার মুসলমানকে দাঙ্গার নাম দিয়ে হত্যা করেই ভারতীয় রাজনীতিতে মোদির উত্থান শুরু হয়। সেই মোদি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মোদির ভারতে গরুর গোশত খাওয়া নিয়ে, কুরবানীর ঈদে গরু জবাই করাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রতিদিন ভারতের কোথাও না কোথাও দাঙ্গা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক হত্যাকান্ড হচ্ছে। কাশ্মীরে মুসলমান নারী পুরুষের উপর গনহত্যা চালানো হচ্ছে, প্রতিবেশী মুসলিম দেশ বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিককে সীমান্তে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন আরোপের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে মিথ্যা অভিযোগে বাংলাদেশের শীর্ষ ইসলামিক নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডের পেছনেও ভারতের সক্রিয় ষড়যন্ত্র আছে বলে বিশ্লেষকমহল ধারনা করেন।
আরেকটি বিষয়ও এখানে উল্লেখযোগ্য। মোদি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বুকে টেনে নিলেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সাধারন মানুষেরা কিন্তু নেতানিয়াহুর ভারত সফরের তীব্র বিরোধীতা করেছে। এরই মধ্যে আরেক খেলা হয়েছে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সারা বিশ্বে ভারতের বিশেষ পরিচিতির অন্যতম একটি কারন এই চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র শিল্পীদের উপর চাপ দেয়া হয়েছিল যাতে তারা নেতানিয়াহুকে বরন করে নেয়। শাহরুখ খান, আমির খান বা সালমান খানের মত সুপারহিট নায়কেরা সরকারের সেই অনুরোধে সাড়া দেননি।
অন্যদিকে শুধু সাড়া নয়, নিজ বাসায় দাওয়াত দিয়ে বিরাট রমরমা পার্টিও আয়োজন করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী শিল্পী অমিতাভ বচ্চন। মজার ব্যপার হলো ১৯৮৪ সালে ভারতে অসংখ্য শিখকে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হত্যা করা হয় তার পেছনেও অন্যতম উস্কানিদাতা হিসেবে এই অমিতাভ বচ্চনের নাম এসেছিল।
সংক্ষিপ্ত এই পর্যালোচনায় একটা সত্য নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে যে, ইসরাইল একটি খুনী রাষ্ট্র। আর তাদেরকে তারাই নিমন্ত্রণ জানায়, বুকে টেনে আলিঙ্গন করে নেয়, বাসায় ডেকে নিয়ে পার্টি করে, যাদের বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ আছে। অর্থাৎ খুনী কিছু ব্যক্তিত্ব ছাড়া ইসরাইলের পাশে আসলে কেউই নেই। আগে শুনতাম চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। সাম্প্রতিক বাস্তবতায় ইসরাইল আর ভারতের বন্ধুত্ব দেখে বলা যায় খুনী আর খুনীতে মাসতুতো ভাই।