অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘বসে আছেন প্রভু, পেছনে দাঁড়িয়ে চাটুকারের দল। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত।’ একটি ছবি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন বাংলাদেশিরা। একটি ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশিদের আত্মসম্মানবোধকে। সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে ইংরেজীতে হাইকমিশন অব ইন্ডিয়া লেখা দেখে সহজেই বুঝা যাচ্ছে এটি সেখানেই তোলা। একমাত্র চেয়ারে সামনে বসে আছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তার পেছনে অনেকটা কাঁচুমাচু ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, সংসদের স্পীকার শিরিন সুলতানা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী।
চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাঁর চাইতে বয়সে বড় দুইজন ব্যক্তি তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। বয়সে ৫ বছরের বড় হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তখন এই প্রণব মুখার্জী ভারতের সামান্য একজন অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও তার চাইতে বয়সে বড়। তাহলে কেনো এই কম্পোজিশন?
এই কম্পোজিশনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেখ আদনান ফাহাদ নামে একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রণব বাবুর কি দাঁড়াতে অসুবিধা? নাকি আমাদের নেতাদের কোনো সমস্যা? আমরা যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, এটা কি তারা ভুলে গেছেন? ভারতীয় হাইকমিশন যেভাবে বাংলাদেশকে দেখাতে চেয়েছে, সেভাবেই পেরেছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা, তাদের সাফল্য।’
বাংলাদেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনে প্রতিবেশি দেশ ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ একটি ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। বিশেষ করে পছন্দের একটি দলকে ক্ষমতায় রাখতে এমন কোনো কাজ নেই তারা করেনি। সম্প্রতি প্রণব মুখার্জীর লেখা আত্মজীবনীতে তিনি তার অনেক কিছুই প্রকাশ করেছেন। মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারকে তিনিই বিদায় করেছিলেন উল্লেখ করে প্রণব লিখেছেন, “তৎকালীন ভারতের জাতীয় উপদেষ্টা এম কে নারায়ণের মাধ্যমে আমার হস্তক্ষেপে আমি সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি এবং দেশটির স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছিলাম।” কিন্তু অনেকেই প্রণবের এই স্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রত্যাবর্তনকে আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তন হিসেবেই দেখেন।
ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগও প্রণব বাবুদেরকে প্রভু সমতুল্য মনে করেন। প্রণব বাবুর বইয়ে উল্লিখিত একটি ঘটনা সেটারই জানান দেয়। ঘটনাটি এরকম, ‘একবার প্রণব মুখার্জির দুই পা ধরে শামীম ওসমান চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। আর বলতে থাকেন, দাদা আপনি যেভাবে পারেন আমাদের নেত্রী, আমাদের আপাকে বাঁচান। তারা মেরে ফেলেছে নেত্রীকে। প্রণব মুখার্জি বিস্ময় নিয়ে তাকান শামীমের দিকে। এবার শামীম বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি দাদা কাল রাতে। আপনি খোঁজ নিন।’
নেত্রীকে কথিত বিপদ থেকে বাঁচাতে প্রভু প্রণবের দুই পা ধরে আওয়ামী লীগ নেতার কান্নাকাটি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে লজ্জিত করে। বর্তমানেও তাদের সেই চাটুকারিতার একটুও কমতি নেই। এই ছবিই তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। একটি দলের পক্ষে ভারতের ক্রমাগত নগ্ন হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই বিরোধীতা ধীরে ধীরে বাড়ছে বই কমছে না। গনমাধ্যমগুলোতে বাকস্বাধীনতা না থাকায় এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
মীরা রেহনুমা নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভারতের মতো দেশের একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কাছে আওয়ামীলীগ নেতারা সেজদাবনত হলেও তাদের ঋণ শোধ করতে পারবে না। যারা কিনা আওয়ামীলীগকে অবৈধ হবার পরও বৈধ করে রেখেছে। আগামীতেও বিনা ভোটে ক্ষমতায় রাখার নীল নকশা প্রস্তুত করে ফেলেছে অলরেডি। এ দেশের নাগরিকের চেয়ে পৃথিবীর অন্য সব দেশে কুকুরের মর্যাদাও অনেক বেশী। আমি লজ্জিত বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে। বাঙ্গালী জাতি হিসেবে নয়। কেননা- লজ্জা একেবারেই বেমানান বাঙালী জাতির জন্য।’
মাসুক মিয়া লিখেছেন, ‘প্রনব বাবুর পেচনে যারা দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন । উনারা বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন ।আর এই যদি হয় আমাদের পতাকা বহনকারীদের অবস্থা তাহলে বলার কিছুই নাই । সম্মান দেখাবেন তাতে কৃপনতা করবেন না এটা আমিও চাই, যেহেতু তিনি মেহমান। তাই বলে বাংলাদেশ উনার পেচনে দাঁড়াবে এটা আমার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।’
নূর আলম ভুঁইয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাবু প্রনব মূখার্জী যখন ভারতের অর্থ মন্ত্রী(৮২-৮৪) হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন এদেশের রাষ্ট্রপতি। তাছাড়া বয়সেও প্রনব বাবু তার থেকে ৫ বছরের ছোট। এমনি এক অবস্থায় একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির সাথে আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রপতি দেখা করতে গেলে যেরকম প্রটোকল দেখানো উচিত সেই সৌজন্যতাও ভারতীয় দূতাবাস দেখায় নাই । হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের লজ্জা না লাগলেও জাতি হিসাবে আমরা এই বেহায়াদের দেখে লজ্জিত।’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কামরুল আহসান নোমানী লিখেছেন, ‘আপনি যদি মনে প্রাণে বাংলাদেশী হন তবে এই ছবিটা দেখার পরে নিশ্চিত আপনার মুখে থুথু জমবে। তবে ছবিটা খুবই সিম্বোলিক। এটাই আজকের বাংলাদেশ। প্রভু বসে আছেন আর তার পেছনে সঙয়ের মত দাঁড়িয়ে আছে চাটুকারেরা। শেইম।’
মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসকদের পেছনে ভারত যে কলকাঠি নাড়ে এই ছবিই তার প্রমান। বাংলাদেশে সরকার ব্যবস্থায় যখনই কোন খারাপ কিছু ঘটে বা স্বৈরাচার সরকারের আবির্ভাব হয় এর পেছনে ভারতের মোড়লীপনা দায়ী। জনগণের উপর জবরদস্তি করে গণতন্ত্রে গলা চেপে ধরে তাদের এদেশীয় চর দিয়ে সাধারণ মানুষকে নিষ্পেষিত করে বাংলাদেশি জাতী হিসেবে আমাদের অস্বীকৃতি জানান দেয়। তাহলে আমরা স্বাধীনতা লাভ কেন করেছিলাম। কিছু বেঈমানদের জন্য আমরা স্বাধীনতা রক্ষায় অক্ষম হতে পারিনা। এখন স্বাধীনতা রক্ষা মানে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা।’
শাহীন শাহরিয়ারের মতে, ‘একটা রাষ্ট্রের এক্স প্রেসিডেন্ট বসে থাকবে,আরেকটা দেশের এক্স প্রেসিডেন্ট এবং আরও কিছু উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে,এটা কোন ভাবেই সম্মান দেওয়া নয়।’
এম এন আমিন লিখেছেন, মনে হচ্ছে মনিব বসে আছে আর ভৃত্য পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোন জাতির জন্য এটা চরম অবমাননাকর।