অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজনীতিতে আবারো আলোচনায় চলে আসছে পদ্মাসেতু। বিশেষ করে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে পদ্মসেতু নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এ আলোচনার সূত্রপাত।
খালেদা জিয়া সেদিন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, জোড়াতালি দিয়ে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আপনারা কেউ এই সেতুতে উঠবেন না।
খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের পরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মাথায় কোনো গিলু নেই। একটি সেতু কীভাবে বানাতে হয় সেটাও জানে না। তার মাথায় আছে কীভাবে এতিমের টাকা আত্মসাত করা যায়। এর একদিন পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতাকর্মীরা পদ্মাসেতুতে উঠে কি না আমরা নজর রাখবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংক অর্থ বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর সরকার বেকায়দায় পড়ে যায়। পরে পদ্মাসেতুর অর্থ যোগান দিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। দেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সরকার পদ্মসেতু নির্মাণের টাকা নিয়েছে। কর্মকর্তাদের বেতন থেকে সরকার টাকা কেটে রেখে দিয়েছে। এরপর দেশের সকল বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিক, শেয়ারহোল্ডারসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে পদ্মসেতুর জন্য টাকা নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, খালেদা জিয়ার কথাই সত্য। সরকার আসলে জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতেছে। এখানে সরকারের কোনো টাকা নেই। আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের ব্যাংকের যত গ্রাহক আছেন সকলের একাউন্ট থেকে পদ্মাসেতুর জন্য টাকা কেটে নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, অন্যান্য সেক্টরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও সরকার পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে। আর মানুষের কাছ থেকে নেয়া টাকার অর্ধেক ব্যবহার করছে সেতুর কাছে আর বাকী অর্ধেক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
আরও জানা গেছে, বিভিন্ন সেক্টর থেকে টাকা তোলার তথ্য খালেদা জিয়ার কাছেও আছে। এজন্যই তিনি সেদিন পদ্মাসেতুকে জোড়তালির সেতু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এখন এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করে যেতে পারবেন কি না এনিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন বর্তমান সরকারের আমলেই পদ্মসেতুর কাজ শেষ হবে। তবে, অনেকেই মনে করছেন পদ্মসেতুর উদ্বোধন হয়তো অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতেই হতে পারে। আর বর্তমান সরকারের আমলে যে পদ্মসেতুর কাজ শেষ হবে না এমন আলামতও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
কারণ, সেতুতে মোট পিলার হবে ৪২ টি। কাজ শুরুর প্রায় ৩ বছর পরও পাওয়া যায়নি পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের ডিজাইন। বেশ কয়েকমাস ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডিজাইন পরিবর্তন করে ২টি উপায়ে সমাধানের কথা ভাবা হলেও, শেষ পর্যন্ত কোনটিকে চূড়ান্ত করতে পারছেন না দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি পিলারের মধ্যে বসেছে প্রথম স্প্যানটি। অথচ যে মাওয়া প্রান্তের ৬ নম্বর পিলার দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিলো, সেখানে নেই কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি।
মাওয়া প্রান্তে ১৪টি পিলারে জটিলতা দেখা দেয়ার পর দায়িত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেনডেলকে। তবে ডিজাইন দিতে তাদের কোন সময়সীমা বেধে দেয়া নেই। এর মধ্যে কয়েকটি পিলারে সর্বোচ্চ ১২৪ মিটার দীর্ঘ ড্রাইভিং করা হয়েছে। এ দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ১৩০ মিটার করা হতে পারে। তবে হ্যামার ব্যবহার করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত। দৈর্ঘ্য বাড়ালে আবার নতুন চুক্তি করতে হবে।
দ্বিতীয় উপায় হতে পারে দৈর্ঘ্য ঠিক রেখে এক একটি পিলারের পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬টি থেকে বাড়িয়ে ৭ অথবা ৮টি করা। তবে এক্ষেত্রে যে সব পিলারে এর মধ্যে ৩টি পাইল বসানো হয়ে গেছে, সেখানে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এছাড়া পাইল সংখ্যা বাড়ালে ভূমিকম্পের সময় তা বেশি চাপ টেনে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না ডিজাইন।
জানা গেছে, এসব কারণে পদ্মাসেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া নিয়ে এখন সরকারের মধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সরকার এখানে গুজামিলের আশ্রয়ও নিতে পারে। আর এমনটি করা হলেও এটা হবে বড় ধরণের আত্মঘাতী কাজ। নির্মাণের পর ঝুঁকি থেকে যাবে। যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের মতে, সব যাছাই বাছাই করে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করলে বর্তমান সরকারের আমলে শেষ হবে না। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে খালেদা জিয়ার হাতেই বহুল আলোচিত এই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হতে পারে।