অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জনপ্রিয় ও একজন সফল মেয়র হিসেবে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরকে যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন এরদোগান, সেভাবেই ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ঢাকাকেও গড়ে তুলে চান ঢাকা উত্তরে জামায়াতের মনোনিত মেয়রপ্রার্থী মো. সেলিম উদ্দিন।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিবিরের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে সেলিম উদ্দিন বলেন, জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, জনপ্রতিনিধিদের ওপরই জনগণের সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব অর্পিত হয়। আর জনগণই পবিত্র আমানত হিসেবে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপর এই মহান ও পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাই কোন জনপ্রতিনিধির পক্ষে এই আমানতের খেয়ানত কাঙ্খিত নয়। বস্তুত এসব জনপ্রতিনিধিদের সফলতা ও ব্যর্থতার ওপরই নির্ভর করে দেশ ও জাতির সাফল্য-ব্যর্থতা। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীর সততা, যোগ্যতা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, দূরদর্শিতা ও সেবার মানসিকতার মত বিষয়গুলো সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা খুবই জরুরি। কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্যতর ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করা না গেলে তার কাছ থেকে যোগ্যতর সেবাও আশা করা যায় না। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের নির্বাচকদের সুচিন্তিত রায় প্রদান করা খুবই জরুরি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান বিশ্ব নগরায়ণ কেন্দ্রীক হয়ে ওঠেছে। তাই নগর সম্প্রসারণ, উন্নয়ন, সর্বাধুনিক অবকাঠামো, আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ, সময়োপযোগি ও আধুনিক পরিবহণ সুবিধা, বিশ্বমানের শিক্ষা, আধুনিক বর্জ ব্যবস্থা আধুনিক নগর ব্যবস্থার প্রধান অনুসঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে। মূলত যে কোন রাষ্ট্রে নগর ব্যবস্থার উন্নয়নই হলো জাতীয় উন্নয়ন তথা রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন। আর এই উন্নয়নের মহাসড়কে নকীব ও অগ্রসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন নগরের কেন্দ্রীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। তাই জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে মেয়রগণই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে তুরস্কের ইস্তাম্বুল নগরীর এক সময়ের অতি জনপ্রিয় ও সফল মেয়র রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগানের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তার যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণেই শুধু ইস্তামম্বুল শহরই নয় বরং পুরো তুরস্কেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যা তুর্কি জাতিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করাতে সহায়ক হয়েছে। নগর উন্নয়নে ও জাতিগঠনে এরদোগানের অবদান পুরো বিশ্বেই এখন রোল মডেল।
তিনি বলেন, মূলত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নগর ব্যবস্থায় জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান সোপান। আমাদের দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য খুবই সহায়ক। মূলত রূপসী নগরী ঢাকা আমাদের দেশের রাজধানী। তাই অপরাপর জাতি-রাষ্ট্রের মত আমাদের রাজধানীর উন্নয়ন ও আধুনিক নাগরিক সুবিধার বিষয়টি জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও খুবই সংবেদনশীল। কিন্তু আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, শিক্ষা সংকট, স্বাস্থ্য সেবার নিম্নমান ও আবাসন সমস্যা খুবই প্রকট। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে সুবিন্যস্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবেই নগর ব্যবস্থা গণমুখী ও বৈশ্বিক মানের নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমাদের প্রিয় ঢাকা নগরীকে তিলোত্তমা নগরী বলা হলেও সমস্যার বিষয়গুলোও বেশ প্রকট। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরী উত্তর নানা সমস্যায় জর্জরিত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা মহানগরী উত্তরকে এখনও সর্বাধুনিক নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এমনকি নগরীতে তীব্র যানজটের কারণে নাগরিক জীবন দুর্বিসহ। নির্ধারিত সময়ে কর্মজীবী মানুষসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। যার ফলে নাগরিক জীবনে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংগঠিত হয়। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে সীমাহীন জলাবদ্ধতা, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট, সনাতনী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিম্নমানের গণপরিবহন, ভঙ্গুর ও মানহীন রাস্তাঘাট এবং অসহনীয় মশার উপদ্রব বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। সর্বোপরি হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ছিনতাই, ধর্ষণ, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নারী নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পুরো নগর জীবন বিপর্যস্ত ও দুর্বিসহ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক অতিক্রান্ত হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। যার প্রধান কারণই হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পৌণপৌণিক ব্যর্থতা। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে এই সংকীর্ণ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, অপরিকল্পিত, সমন্বয়হীন ও অপরিনামদর্শী উন্নয়ন কার্যক্রম নগরবাসীর দূর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে। যা বিশ্বের আর কোন দেশে সচারাচর পরিলক্ষিত হয় না। নগরীর সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে আশু সমাধানের লক্ষ্যে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। তাই ঢাকা মহানগরী উত্তরের সকল সমস্যা-সম্ভবনা চিহ্নিতকরণ এবং সেসব সমস্যা সমাধানে অপরিকল্পিত ও অসময়োপযোগী নগরায়ণ বন্ধ করে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে ঢাকা সিটি উত্তরকে একটি সর্বাধুনিক, উন্নত নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন মেগাসিটিতে পরিণত করতে আমি সকল স্তরের নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
নগরবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শিবিরের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, ইনশাআল্লাহ নগরবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। একই সাথে এই বিষয়ে সকল স্তরের নগরবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে সম্পূর্ণ অনানুষ্টানিকভাবেই দলের পক্ষ থেকে মেয়রপ্রার্থী ঘোষনা করে চমক দেখায় বিএনপি জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। দলটি তাদের ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার আমির মু. সেলিম উদ্দিনকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে মনোনিত করে।