অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকার নিজেদের মতো করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ করে সুপ্রিমকোর্টে জমা দেয়ার পর বুধবার এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ সরকার প্রণীত এ গেজেটের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও মাসদার হোসেন মামলা পরিচালনাকারী সিনিয়র আইনজীবীরা সরকার প্রণীত এই গেজেটকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সরকারের এ গেজেট মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে দেয়া শর্তাবলীর পরিপন্থী বলেও মনে করছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের কথা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল। এ গেজেটের মূল লক্ষ্য হল অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সরকারের হাত থেকে নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালনা করা। বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, ট্রান্সফারসহ সব কিছু দেখাশুনা করবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
এ লক্ষ্যেই সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গেজেট প্রকাশের জন্য গত বছরের প্রথম থেকেই সরকারকে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে একবার একটি খসড়া গেজেট করলেও সুপ্রিমকোর্ট সেটাকে ফেরত দিয়েছিল। এরপর প্রধান বিচারপতি সিনহা সরকারকে একাধিকবার সময় দেয়ার পরও সরকার নতুন করে আর কোনো গেজেট প্রকাশ করেনি। একটা পর্যায়ে এসে সরকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
এরপর, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করার একসপ্তাহ পরই সরকার আবার নিজেদের মতো করে আরেকটি গেজেট প্রকাশ করে সুপ্রিমকোর্টে জমা দেয়। আপিল বিভাগ সরকারের জমা দেয়া এই গেজেটের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি জানায় নি। বরং তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, সরকার প্রণীত গেজেট প্রকাশের পরই এনিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন মাসদার হোসেন মামলার পরিচালনাকারী আইনজীবীসহ অন্যান্য সিনিয়র আইনজীবীরা। বিশেষ করে সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এনিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। সিনিয়র আইনজীবীরা সরকার প্রণীত এ গেজেটের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় বেকায়দায় পড়ে যায় সরকার ও আপিল বিভাগ।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কারণে বিচারপতি সিনহাকে সরকার জোর করে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে, আবার সেই বাধাই সরকারের সামনে এসে হাজির হয়েছে। ড. কামাল এবং আমিরুল ইসলামকেও সরকার বিচারপতি সিনহার মতোই পথে কাঁটা হিসেবে দেখছে। যার কারণে তারা দুইজনকে মাসদার হোসেন মামলার পরিচালনা কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়েছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, দেশের শীর্ষ ছয়জন আইনজীবী মাসদার হোসেন মামলাকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, অ্যাডভোকেট এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামালসহ ছয়জন আইনজীবী অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত শৃংখলা ও আপিল বিধিমালা-২০১৭ সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আপিল শুনানিকালে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বার্থবিরোধী বক্তব্য আপিল বিভাগে উপস্থাপন করায় এবং তার উক্ত বক্তব্য আদালত কর্তৃক গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনকে মাসদার হোসেন মামলা পরিচালনার ক্ষমতা (ওকালতনামা) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সরকার হাতে রাখার ক্ষেত্রে দুই আইনজীবীকে বাধা হিসেবে মনে করছেন। এজন্য তাদেরকে মাসদার হোসেন মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের উপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ আবারও প্রকাশ পেলো।