অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের বাকি মেয়াদের জন্য পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বুধবার বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন কথিত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার। হয়তো আইসিটি মন্ত্রণালয়ের জন্যই তাকে বাছাই করেছেন শেখ হাসিনা।
দেশের আইটি সেক্টরের বহু পদে আসীন জব্বার নিজেকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রচার করতে ভালবাসেন। ঢাকা কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিলেন মোস্তফা জব্বার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলায়। মানবিক আর বাংলায় পড়াশুনা করে তিনি কিভাবে কম্পিউটার বিজ্ঞানী হয়ে গেলেন তা এক মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।
অনলাইনে তিনি ‘জব্বার কাগু’ নামেই বেশি পরিচিত। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টগন তার আসল চেহারা অনেক আগেই উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অনলাইনে জব্বার কাগু লিখে সার্চ দিলেই তার অপকর্মের ফিরিস্তি চলে আসে। নিজেকে বিজয় বাংলা কিবোর্ডের জনক দাবি করলেও মানবিক আর বাংলায় পড়ুয়া জব্বারের দ্বারা যে কখনোই বিজয় কীবোর্ড তৈরি করা সম্ভব নয় সেটা সবারই জানা ছিলো। পরবর্তীতে অবশ্য বিজয় কীবোর্ডের তৈরির আসল গোমরও ফাঁস হয়। জব্বারের পক্ষে যে কীবোর্ডের লে-আউট তৈরি সম্ভব নয়, সেটা নিয়ে অনেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করলেও তিনি তা গ্রহন করেননি।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, মোস্তফা জব্বার একজন অতি মুনাফালোভী ও প্রতারক হিসেবে আইসিটি অঙ্গনে পরিচিত। জানা যায়, বিজয় কীবোর্ডের জনক দাবি করলেও এর প্রস্তুতকারক মোস্তফা জব্বার নন। বিজয় কী বোর্ড বানিয়েছিলেন বুয়েটের ৯৪ ব্যাচের CSE এর ছাত্র মুনিরুল আবেদিন পাপ্পানা, যাকে বুয়েটে ৪র্থ বর্ষে পড়া অবস্থায় মাইক্রোসফট চাকরী দিয়ে নিয়ে যায়। যার পুরো পারিশ্রমিকটুকুও পরিশোধ করেনি জব্বার। তার বানানো বিজয় ২০০০-কেই শুধু খোলস পালটে আরো ৩ বছর বিজয় ২০০৩ নামে চালানো হয়। জব্বারের প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে একটি ছোট্ট বার্তা কীবোর্ডের ভিতরে সেট করে গিয়েছিলেন পাপ্পানা। যা বিজয় ২০০০ সহ পুরান এবং আদি এডিশনে ঢুকলেই শো করতো।(নিচের ভিডিওতে দেখুন)
ক্ষমতার বলে অন্যজনের তৈরি করা বিজয় কীবোর্ডের প্যাটেন্ট নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন জব্বার। এমনকি তার মিথ্যা কপিরাইট ক্লেইমের জন্য গুগল তার প্লেস্টোর থেকে রিদমিক কিবোর্ড সরিয়ে দিয়েছিল।
জানা যায়, মোস্তফা জব্বারের কাছে গুগল তাদের এন্ড্রয়েড সিস্টেমের সাথে বিজয়কে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলো নতুন প্রজন্মকে মোবাইল ফোনে বাংলায় লিখতে পারার সুবিধা করে দিতে। কিন্তু মুনাফালোভী জব্বার অতি উচ্চমূল্য দাবি করায় গুগল জনৈক মেহেদি হাসান খান ও তার টিম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘অভ্র’কে বিনামূল্যে মোবাইল ফোনে উন্মুক্ত করে দেয়। এতে অভ্রের জনপ্রিয়তা ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে থাকে। তা সহ্য করতে না পেরে কিছুদিন পরই অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী জব্বার কপিরাইট মামলা করে মেহেদি হাসান খান ও তার টিমের বিরুদ্ধে। তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে দাবি করেন, অভ্র একটি পাইরেটেড সফটওয়্যার, যা বিজয় হ্যাক করে করা হয়েছে এবং এর নির্মাতা একজন হ্যাকার। তিনি চেয়েছিলেন বিজয় কীবোর্ড ফ্রি করে না দিয়ে বিক্রি করে একাই ব্যবসা করে যাবেন। এখানে কাউকে অংশীদার হতে দিবেন না। কিন্তু অভ্র এসে তার ব্যবসায় ভাটা তৈরি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।
পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন যখন ভোটার আইডি কার্ড তৈরির কাজে বিজয় না ব্যবহার করে অভ্র ব্যবহার করলো, তখন জব্বারের গাত্রদাহ আরো প্রবল হয়। তখন সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কিবোর্ড লেআউটের কপিরাইট তিনি নিজের নামে করিয়ে নেন। যা ছিলো সম্পূর্ণ অবৈধ। আর পাশাপাশি নিজের খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যান অভ্রর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। এভাবেই তিনি একজন অতি মুনাফাখোর, লোভী হিসেবে নিজের চরিত্রটি সবার সামনে উন্মুক্ত করেন।
মোস্তফা জব্বার শুধু একজন প্রতারক ও লোভী মানুষই নন, তিনি একজন কট্টর ধর্মবিদ্বেষীও। ইসলাম ধর্ম ও বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রায়সময়ই তাকে কটুক্তি করতে দেখা গেছে। ২০১০ সালে মুসলমানদের কুরবানিকে কটুক্তি করে তিনি তার ফেসবুকে লিখেছিলেন-
‘একটি মাত্র মুসলিম দেশ বাংলাদেশে এক কোটি ছাগল, ৮০ লাখ গরু, তিরিশ লাখ ভেড়া, ২০ লাখ মহিষ এবং কিছু উট একদিনেই শেষ- এর নাম কোরবানী- আল্লাহ কো পেয়ারা হায় কোরবানী!’
মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ও অবশ্য পালনীয় রীতি কুরবানীর মত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে এমন কটুক্তি করা একজন ব্যক্তি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ায় ক্ষোভ জেগেছে সর্বত্র। সরকার কি মন্ত্রী বানানোর জন্য এমন ধর্মবিদ্বেষী ও নাস্তিকদের ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না, এমন প্রশ্ন রেখেছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একজন ভণ্ড, প্রতারক, মুনাফালোভী ও ধর্মবিদ্বেষী জব্বারের কাছ থেকে এ জাতি ভালো কিছুই আশা করতে পারে না। অনেকেই মনে করছেন তিনি হয়তো এবার মন্ত্রীত্বের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিনামূল্যে বাংলা লেখার মাধ্যম অভ্র ও রিদমিকের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন এবং নিজের ব্যবসাকে আরো চাঙ্গা করবেন। এ ধরণের লোকেরা যে মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করবেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।