অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নের ব্যাপক প্রচারে ব্যস্ত সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কর্ণধার হিসেবে পরিচিতি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ও সম্প্রতি একটি দলীয় সভায় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন এখন থেকে ব্যাপকভাবে উন্নয়নের প্রচার করতে হবে।
বায়বীয় ও কাগজে কলমের উন্নয়নের প্রচার সরকারের লোকজন আরও আগ থেকেই করে আসছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে উন্নয়নের প্রচারে আরও ব্যাপকতা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সবাই মিলে প্রতিদিন সভা-সমাবেশে কথিত উন্নয়নের একই রেকর্ড বাজাচ্ছেন। অন্যান্য দিনের মতো প্রধানমন্ত্রী রোববারও যশোরে এক জনসভায় উন্নয়নের সেই পুরনো রেকর্ড বাজিয়ে এসেছেন।
সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আ.লীগ নেতারা এখন মানুষকে ২টি বিষয় বুঝানোর চেষ্টা করছেন। একটি হলো-স্বাধীনতার পর এদেশের বিভিন্ন সেক্টরে যত উন্নয়ন হয়েছে সবই আওয়ামীগের হাত ধরে হয়েছে। আর লুটপাট, দুর্নীতি, খুন, হত্যা, গুম-অপহরণ, চাদাবাজি, মানুষের বাড়িঘর ও জমি দখলসহ যত অপকর্ম আছে সবই করেছে বিএনপি-জামায়াত।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পর এদেশে বড় ধরণের যে কয়টি ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, ব্যাংক দখল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ও জমি দখল, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি-লুটপাট, খুন-হত্যা, ধর্ষণ, গুম-অপহরণ ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সবগুলোই হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে।
এসব অপকর্মের জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। যদিও এসব অপকর্মের দায় তারা ঢালাও ভাবে বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে, সরকারের ভেতর থেকেই এখন এসবের বিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে। লুটপাট-দুর্নীতির কথা এখন সরকারের মন্ত্রীরাই অকপটে স্বীকার করছে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রকশ্যে সরকারের মন্ত্রীদেরকে চোর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে সরকারের চাপে পড়ে তিনি কথা অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর গতকাল শনিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বলেছেন, দুর্নীতি নিয়ে আমরা এখন খুবই চিন্তিত। দুর্নীতি বন্ধে দুদকও কোনো কাজে আসছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উন্নয়নের রেকর্ড প্রতিদিন বাজালেও শিক্ষামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকেই প্রমাণ হয় দেশে দুর্নীতি-লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
এমনকি এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী-এমপির স্ত্রী-সন্তানেরাও লুটপাট ও মানুষের বাড়িঘর দখলে মাঠে নেমেছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এক নারী ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবারের বিরুদ্ধে বাড়ি দখলের অভিযোগ করেছেন। মন্ত্রীর স্ত্রী-সন্তানেরা ওই নারীকে তার বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়িটি দখলে নিয়ে গেছে।
পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তাজনুবা তাজরীন নামের ওই নারী বলেছেন, হুমকিতে বাড়িছাড়া হওয়ার পর ঈশ্বরদী থানায় বার বার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফের ক্যাডার বাহিনী গত ২৮ নভেম্বর অস্ত্রের মুখে পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে বাসার সব মালামাল লুট করে ট্রাকযোগে নিয়ে যায়, যার আনুমানিক মূল্য চার লাখ টাকা। এর প্রতিবাদ করলে তারা তার স্বামী এবং চার বছরের সন্তানসহ সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বায়বীয় উন্নয়নের প্রচার যতই করুক না কেন দেশের জনগণ এখন আর আগেরমতো এত বোকা নয়। সরকার কী করেছে এবং কী করছে সেটাও জনগণ জানে। শুধু উন্নয়নের প্রচার করলেই হবে না, নির্বাচন আসলে লুটপাট, দুর্নীতি, খুন, হত্যা, গুম-অপহরণ ও মানুষের বাড়িঘর ও জায়গা জমি দখলের জবাব জনগণের কাছে দিতে হবে।