অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
তৃতীয় শক্তি বা আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলে আসছিল। এ উদ্যোগটা মূলত ছোট দলের বড় নেতা হিসেবে পরিচিত তারাই নিয়েছিলেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসলেও আজ পর্যন্ত দেশের কোনো এলাকা থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেন নি। নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছে এমন দুয়েকজন নেতাও পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা একাধিক মিটিং করেছেন। অবশেষে গত সোমবার রাতে আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে চারদলীয় একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন এ জোটকে স্বাগতও জানিয়েছে।
আজ সারাদিন আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চারদলীয় এ নতুন জোট। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নবগঠিত এই জোটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যত নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষনও শুরু করেছেন। চারদলীয় এ জোটের ভবিষ্যত নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে এটাকে হালুয়া-রুটির জোট হিসেবেও আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, হালুয়া-রুটি শেষ হয়ে গেলে জোটের কার্যক্রমও বিলুপ্তি ঘোষণা করা হবে।
কেউ কেউ বলছেন, এর আগেও অনেকে নামস্বর্বস্ব ২০টা, ৩০টা ও ৭০টা দল নিয়ে জোট করেছেন। যখন হালুয়া-রুটি শেষ হয়ে গিয়েছে তখন জোটও বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান চারদলীয় জোটের নেতারাও মূলত সংসদে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য জোট করেছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে নয় বরং ব্যক্তি স্বার্থে জোট করেছেন, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। তাই, এ জোট বেশি দিন টিকে থাকা নিয়েও সংশয় তাদের।
এদিকে, নবগঠিত জোটের নেতাদের নিয়েও বিতর্ক আছে। চার দলের মধ্যে জেএসডির আসম রব ছাড়া বাকীদের কারো কোনো দলীয় আদর্শ নেই। দেখা গেছে, তারা যখন যেখান থেকে কিছু সুবিধা পেয়েছে সেখানে গিয়েই আশ্রয় নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব এখনও পর্যন্ত দলীয় আদর্শ ধরে রেখেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এখনও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দলহীন জীবন-যাপন করছেন। বছর দুয়েক আগে নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠন করে এটার ব্যানারে রাস্তায় নামার চেষ্টা করছেন। তবে, দল থাকলেও ব্যক্তি হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নারও আ স ম রবের মতো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
পদচ্যুত সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ছাড়ার পর থেকে তিনি ছিন্নমূল এতিমের মতোই জীবন-যাপন করছেন। রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষেরও তার প্রতি কোনো আস্থা নেই। অনেকেই মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার সঙ্গে বি. চৌধুরীর মৌন সমর্থন ছিল। কারণ, পাশের রুমে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলেও ঘাতকরা তার রুমে ঢুকেনি। এ ঘটনার পর থেকেই তার অবস্থান নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ সংশয় দেখা দেয়। এছাড়া, ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার তাকে রাষ্ট্রপতি করেছিল। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ট হতে থাকে। তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল রাষ্ট্রপতি যেকোনো মুহূর্তে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। গোপনে গোপনে সেনাবাহিনীকে দিয়ে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। গোপন সূত্রে এ সংবাদ পাওয়ার পরই খালেদা জিয়া তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন। এরপর থেকে বি. চৌধুরীর ওপর এদেশের মানুষের আর আস্থা বিশ্বাস নেই। অনেকেই মনে করেন, বি. চৌধুরী কখন যে কী করেন তার ঠিক নাই।
এরপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এক সময় আওয়ামী লীগের ঘরের লোক ছিলেন। তাকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতো মানুষ। শেখ হাসিনার সঙ্গে ঝগড়া করে তিনি দলে ছেড়ে চলে আসেন। প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে তার কিছু গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও এখন আর তা নেই। কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কথা বললেও মানুষ মনে করে এসব তার আইওয়াশ। অনেকেই বলেন, কাদের সিদ্দিকী হচ্ছে দ্বিমুখি সাপ। তিনি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া উভয়ের পাতিল থেকেই দুধ খাচ্ছেন।
বিশেষ করে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলার পর কাদের সিদ্দিকী যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, সেটা নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্দ হয়েছেন।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতনরা মনে করছেন, কাদের সিদ্দিকীর আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি নেই। তিনি এখন সুবিধা মতো কথা বলেন। যখন যা খুশি তাই করেন। এজন্য যেকোনো সময় জোট থেকে চলে আসতেও পারেন।
Discussion about this post