অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে বলা হলেও আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উন্নত জীবনযাপনের জন্য রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে আগামী ছয় মাসের মধ্যে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রোববার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী-২ শিবিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করেছে সশস্ত্র বাহিনী। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধের কাজ সম্পন্ন হলে তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। রোহিঙ্গারা এ দেশে যত দিন থাকবে, তত দিন তাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দেওয়া হবে।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার চ টিন্ট সোয়ে স্বাক্ষর করেন। তবে সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও সেদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জয়েন্ট ওয়াকিং গ্রুপ তিন সপ্তাহের ভেতর গঠন করা হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য দ্বিপক্ষীয় ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলার পর আজকের ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ মানুষের মনে সেই চুক্তি নিয়ে সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে সই হওয়া সেই চুক্তিতে কি রয়েছে সেটা জানায়নি সরকার।
এর আগে এই চুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কী চুক্তি হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া এই চুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে পত্রিকায় অনেক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয় মিয়ানমারের ইচ্ছা অনুযায়ীই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে জলাঞ্জলি দেয়া হয় বাংলাদেশের স্বার্থকে। দুই মাসের কথা বলে এখন ছয় মাসের মধ্যে ভাসানচর দ্বীপে পাঠানোর কথা বলায় চুক্তির প্রতি মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সেই সন্দেহই সত্য প্রমানিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আদৌ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে কিনা সেটা নিয়েই এখন নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশে ২৫ বছর ধরে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা নয়, ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত আসা ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। রাখাইনে ফেরানোর পর শুরুতে রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়ি বা এর কাছাকাছি নয়, রাখা হবে একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের ইচ্ছা অনুযায়ী, ’৯২ সালের চুক্তির মতোই এবারের প্রত্যাবাসন চুক্তি সই করেছে দুই দেশ।
আরো জানা যায়, এ দেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া; অস্থায়ী শিবির নয়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রত্যাবাসন শেষ করা; রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়ি বা আদিনিবাসের কাছাকাছি কোথাও রাখা ইত্যাদি বিষয়ে সই হওয়া চুক্তিতে কিছুই উল্লেখ নেই।
Discussion about this post