মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব। জন্ম ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি। অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেন। রাজনীতি শুরু ষাটের দশকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে। স্বাধীনতার পর তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবেও তিনি কাজ করেন। সরকারি চাকরি করেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে মির্জা ফখরুল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের কৃষি ও বিমানপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে বিএনপির কাউন্সিলে তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেছেন অনেকবার। নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন চলছে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আগামী নির্বাচন নিয়ে কিছু আপেক্ষিক ব্যাপার আছে। নির্বাচন যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হয়, তাহলে তার প্রস্তুতি হবে আলাদা। আর যদি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন যদি সে রকম ব্যবস্থা নেয়, তার জন্য প্রস্তুতি হবে আরেক রকম। এ জন্য আমি নির্বাচনকে আপেক্ষিক বলছি। এরপর আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য সব সময় তৈরি থাকে। এক মাস সময় দেবেন। এই সময়ের মধ্যে আমরা তৈরি হয়ে যেতে পারব। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। আর এই নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য।
নয়া দিগন্ত : গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ কি ফিরে আসছে?
মির্জা ফখরুল : আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দাবি আমাদের নয়। এই দাবি ছিল যারা আজ ক্ষমতায় তাদের। তাদের সেই দাবিতে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করেছিলাম। এখন তারা দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষমতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইছে।
নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা আপনারা তুলে ধরছেন না।
মির্জা ফখরুল : এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আপনি যখন বলবেন, সংবিধান ছাড়া আমরা কোনো কিছুতে যাবো না তখন তো আর এ বিষয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের তাহলে বলতে হবে, আগে সংবিধান পরিবর্তন করুন, তাহলে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবো। আমরা আলোচনায় রাজি আছি। আলোচনায় বসলে পথ বেরিয়ে যাবে। আমরা বারবার এ কথা বলে আসছি- আসুন আমরা বসি। রূপরেখা কী হবে না হবে তা বিস্তারিত আলোচনার বিষয়। এতে অনেক রকম বিষয় আসতে পারে। আমাদের প্রস্তাব থাকবে, তাদের প্রস্তাব থাকবে। এরপর গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি ফর্মুলা বেরিয়ে আসবে। এটা অবাস্তব বিষয় নয়। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। যে রায়ের বরাত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হলো, সেই রায়ে কিন্তু বলা হয়েছে আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।
নয়া দিগন্ত : তাহলে বিএনপির দাবি কি সংলাপ না সংবিধান সংশোধন?
মির্জা ফখরুল : বিএনপির দাবি খুব স্পষ্ট। সংলাপের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো আসবে। প্রথম দিক হলো, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা আলোচনা চাই। নির্বাচন কমিশন গঠন করা থেকে আমরা এই দাবি জানাচ্ছি। সংলাপের ব্যাপারে আমরা সব সময় একই কথা বলে আসছি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ছাড়া এই সঙ্কট সমাধান করা যাবে না। আর এই সঙ্কট সমাধানে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। যখন সরকার এ বিষয়ে রাজি হবে তখন আমরা রূপরেখা দেবো। আলোচনায় রাজি হলে রূপরেখার বিষয় আসবে। সময় হলে অবশ্যই জনগণের সামনে রূপরেখা তুলে ধরব।
আমরা বলতে চাইছি, জাতির প্রয়োজনে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের প্রয়োজনে, সবার কাছে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য সংলাপ প্রয়োজন।
নয়া দিগন্ত : সংলাপের মাধ্যমে যে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা আপনি বলছেন তা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে কেন্দ্র করে হবে?
মির্জা ফখরুল : অবশ্যই। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনকালীন যদি একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে তাহলে কখনো সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হবে না। সেই সরকার কিভাবে হবে বা কিভাবে করা যাবে, এর রূপ কী হবে সেগুলো আলোচনা করতে পারি।
নয়া দিগন্ত : এ ক্ষেত্রে সংসদ বহাল থাকার বিষয়টি আছে?
মির্জা ফখরুল : সংসদ বিলুপ্ত করার বিষয়টি আমাদের বড় দাবি। বলা যায়, এটা আমাদের দ্বিতীয় দাবি। প্রথম দাবি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। আর প্রধানমন্ত্রী বহাল থাকলে তো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে অনড় অবস্থানের মধ্যে কিভাবে আশা করা যায় সমাধানে আসা যাবে?
মির্জা ফখরুল : আশা তো সব সময় করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কল্যাণে কাজ করে। সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হোক তা সবাই চায়। যদি তাই হয়, তাহলে সঙ্কট হতেই পারে, কিন্তু সঙ্কট নিরসনের জন্য আলোচনা করতে হবে। তা যদি না হয় তাহলে মানুষ বুঝবে, যারা আলোচনা করতে চায় না, তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমরা এ কারণে বলছি, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ও একদলীয় শাসন প্রবর্তনের জন্য সরকার একই পদ্ধতিতে চলতে চায়।
নয়া দিগন্ত : ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এ রকম ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাবনা কতটুকু বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল : এটা নির্ভর করছে সরকার কী প্রস্তাব দিচ্ছে তার ওপর। গতবার সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে ব্যাপারে বলা হয় যে আমরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এ কথা মোটেই সত্য নয়। এ সময় একটি হরতাল চলছিল, আমরা বলেছিলাম হরতাল শেষ হোক এরপর আমরা আলোচনায় বসব, কিন্তু তারা তা মানেনি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি সংলাপে না আসুক এবং নির্বাচনে না আসুক, যাতে তারা একতরফা নির্বাচন করে ফেলতে পারে। তারা তো সে সময় এক দিন অপেক্ষা করতে পারত।
নয়া দিগন্ত : আপনারা আলোচনা বা সংলাপের ওপর তাগিদ দিচ্ছেন, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে খুব আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কী হবে?
মির্জা ফখরুল : গণতন্ত্রের ভাষা তো সমঝোতার ভাষা। আমি বারবার বলব, আলোচনায় বসুন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। বল হচ্ছে সরকারের কোর্টে। আমাদের দাবি কিভাবে তারা গ্রহণ করবে সে সিদ্ধান্ত তাদের। যদি তারা গ্রহণ না করে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। দেশের রাজনৈতিক প্রবাহ যদি অন্যদিকে চলে যায় সে দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। দেশের যে বর্তমান অবস্থা এবং ভূরাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত হবে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু সঠিক ও গ্রহণযোগ্যভাবে করা যায় সে ব্যবস্থা করা। তা না হলে আগামী দিনে এ দেশ সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন কমিশনের সাথে আপনাদের একদফা সংলাপ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনাদের আস্থা কি ফিরে এসেছে?
মির্জা ফখরুল : নির্বাচন কমিশনের অবস্থানকে আমরা বাতিল করে দিতে চাই না। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া আছে তা যদি প্রয়োগ করতে চায় তাহলে নির্বাচন কমিশন মোটামুটি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আমরা যেসব কথা শুনছি তা নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলছেন, সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের এই অবস্থান তো বিভ্রান্তিকর। নির্বাচন কমিশন এখন তোষামোদিতে নেমে পড়েছে। ভাবছে তোষামোদি করে যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনা যায়। আমরা তো তোষামোদির জন্য রাজনীতি করি না, জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই তা করার জন্য আমরা কথা বলছি। আমরা তো বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য বলছি না। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দেয়া আছে তা প্রয়োগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সে ভূমিকা আমরা দেখতি পারছি না।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে?
মির্জা ফখরুল : আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থার ঘাটতি আছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করতে চাই না। আমরা দেখতে চাই।
নয়া দিগন্ত : আপনারা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের ওপর কথা বলছেন। কেন এ বিষয়ে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে?
মির্জা ফখরুল : আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে দেখা যাচ্ছে সেনাবাহিনী যখন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে তখন সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ জনগণ এতে আস্থা পায়। আমাদের দেশে এখনও সেনাবাহিনীর ওপর এই আস্থা আছে তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। সেনাবাহিনী থাকলে গুণ্ডামি করে, অস্ত্র বা লাঠি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসা লোকজনকে বাধা দিতে পারবে না মানুষ এমন আস্থা পায়। যে কারণে আমরা বরাবরই বলছি আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে সেনা মোতায়েন জরুরি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তাতে সব সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সে নির্বাচন সবাই গ্রহণ করেছে। জনগণ শান্তিতে ভোট দিতে পেরেছে। এ কারণেই আমরা সেনা মোতায়েনের দাবি করে আসছি।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন দেশের তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি। আপনারা কেমন বার্তা পাচ্ছেন?
মির্জা ফখরুল : দেখুন বিদেশীরা আমাদের দেশের রাজনীতি ঠিক করে দেবে না। তারা বলছে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেখতে চায়। আমাদের সাথে দেখা করতে এসে তারা এসব বলছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন তো আমাদের ওপর নির্ভর করছে না। তারা সরকারকে বলছে কি না তা আমরা জানি না। সরকারকে বলতে হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করো।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে টানাপড়েন চলছে এমন খবর আসছে।
মির্জা ফখরুল : আমাদের জোটের মধ্যে কোনো টানাপড়েন নেই। কয়েক দিন আগেও আমরা বৈঠক করেছি। খুবই ভালো বৈঠক হয়েছে। আমাদের জোটের মধ্যে কোনো টানাপড়েনের ব্যাপার নেই।
নয়া দিগন্ত : দীর্ঘদিন পর বিএনপি চেয়ারপারসন জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। কী ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকে আপনারা যাবেন?
মির্জা ফখরুল : জনগণ পরিবর্তন চায়। এই সরকারকে আর রাষ্ট্রপরিচালনায় দেখতে চায় না। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। জনগণের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। হত্যা, গুম-খুন, মামলায় জনগণ জর্জরিত হয়ে পড়ছে। এখন কারো কথা বলার ক্ষমতা নেই। শুধু বিএনপি কেন অন্য দলের লোকজনকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের তুলে নেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের তুলে নেয়া হচ্ছে। ছাত্র-গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত গুম হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সাদা পোশাকধারী লোকজন এসব করছে। জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে ধারণা তৈরি হচ্ছে এগুলো সরকার করছে। পরবর্তী কর্মসূচি আমরা যাই দেই না কেন মানুষ এ সরকারকে আর দেখতে চায় না। ফ্যাসিজম চলছে। ফলে মানুষ ভয়ে অনেক কিছু করতে পারছে না। এর মধ্যেই আমাদের এগোতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণের কাছে যাওয়া। জনগণকে সাথে নিয়ে ভবিষ্যৎ চলার পথ তৈরি করা।
নয়া দিগন্ত : আমরা একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি রোহিঙ্গা সমস্যা এখন দেশের জন্য প্রধান সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্ধুরাষ্ট্র ভারত এবং চীন আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল : এ ক্ষেত্রে আমরা কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছি। যাদের আমরা বন্ধু মনে করি কিংবা বলা হয় যেসব দেশের সাথে বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে তারা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দিচ্ছে না। বরং কোনো কোনো দেশ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলতে হবে সরকার এ ব্যাপারে কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : শুধু কূটনৈতিক ব্যর্থতা না, বাংলাদেশে ভূকৌশলগত স্বার্থে নানা পক্ষের দ্বন্দ্বে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে?
মির্জা ফখরুল : ভূকৌশলগত স্বার্থের দিক তো কূটনীতির বাইরের বিষয় নয়। কূটনীতি দিয়ে তো নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে তাতে সরকারের অবস্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
মির্জা ফখরুল : সরকার যেনোতেনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। খুন, গুম বা বিচারপতিকে দেশ থেকে নির্বাসনে পাঠিয়ে হোক তারা ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। কিন্তু সরকারের অবস্থান হচ্ছে ভঙ্গুর। সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ছে। এর মাধ্যমে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। সরকার অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post