অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যুগ যুগ ধরে চলে আসা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানকে পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধানে পরিণত করেছে সরকার। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সাভারের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির সাজা কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আদালত। এ রায়ের পরই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক আদেশ জারি করেন যে, এখন থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হবে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
আদালতের আদেশে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মওকুফ (রেয়াদ) পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি অন্য কোনো সুবিধা (রেয়াদ) পাওয়ার দাবি করতে পারে না।
কিন্তু, প্রচলিত ফৌজদারি আইন ও কারাবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর সাজা। এরপর আসামি রেয়াদ পেলে তা এই সময় থেকে বাদ যায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ থেকে বিচারিক সময়ের কারাভোগের সময়কাল বাদ দিয়ে গণনা করতে হয়। ফলে সাজার সময়কাল কমে যায়।
এছাড়া বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালে এক রায়ে বলেছেন যে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ সাড়ে ২২ বছর কারাদণ্ড।
কিন্তু, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়মকে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানকে বাতিল করে আমৃত্যু কারাদণ্ডে পরিণত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সরকারের নির্দেশেই যাবজ্জীবনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড হিসেবে পরিণত করেছেন। এ নিয়ম পরিবর্তনে সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতারা যাতে মৃত্যুর আগে আর কোনো দিন কারাগার থেকে বের হতে না পারে। বিশেষ করে জামায়াতের নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওয়ায়েজিন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়টিকে মাথায় রেখে এ আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে।
সরকারের ধারণা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান বহাল থাকলে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাজা শেষে এক সময় বেরিয়ে আসতে পারে। যাবজ্জীবনকে পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ডে পরিণত করলে মৃত্যুর আগে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না।
এছাড়া জামায়াতের কম বয়সী কোনো নেতাকেও যদি আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয় তাহলে, তারাও বেরিয়ে আসতে পারবে না।
তবে, আপিল বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আপিল বিভাগের এ রায়কে তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ রায় আপিল বিভাগের আগের একটি রায়ের সঙ্গে পরস্পর বিরোধী। এ কারণে এক্ষেত্রে আইনের ব্যাখ্যায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক বিবেচনায় এ রায় দেয়া হয়নি। তাই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।
মাহবুব হোসেন আরও বলেছেন, বিচারপতি সুলতানার দেয়া রায় ও আইন বলবৎ থাকাবস্থায় বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রায় দিয়ে বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। আপিল বিভাগের আগের রায় বাতিল না করেই এ রায় দেয়া হয়েছে। ফলে রায়ের ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
Discussion about this post