নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ সভাপতি মজিবুর রহমান অনিকের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শুভ্রা মাহমুদ।
শুভ্রার অভিযোগ, আজ মঙ্গলবার সকালে অনিক একই কলেজের ১০-১৫ নেতা-কর্মী নিয়ে দারুস সালাম এলাকায় তাঁর ফ্ল্যাটে যান। সেখানে অনিক, সাদেক ও নিঝু তাঁকে মারধর করেন। মারধর করে তাঁকে দারুস সালাম থানায় নিয়ে যান। তাঁকে চার ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখেন। পরে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুভ্রা মাহমুদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, অনিকের সঙ্গে ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে তিনি শারীরিক সম্পর্ক করেন। এর মধ্যে অনিক আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করেন। তখন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী মামলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মামলা করতে তাঁর বাবা-মা নিষেধ করেন। দুই দিন আগে মেয়েটি শুভ্রার বাসায় আশ্রয় নেন। শুভ্রাকে নিয়ে গতকাল সোমবার তিনি লালবাগ থানায় যান অনিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে। লালবাগ থানা-পুলিশ তাঁদের মিরপুর থানায় মামলা করতে বলে। মিরপুর থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে থানা থেকে অনিকের খোঁজে পুলিশ তাঁর দারুস সালাম এলাকার বাসায় যায়। সেখান থেকে ফিরে পুলিশ তাঁদের বলেন, ‘এটা আমাদের এলাকায় পড়েনি। দারুস সালাম থানায় পড়েছে।’ পরে তাঁরা আদালতে গিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেন। গতকাল রাতেও মেয়েটি শুভ্রার বাসায় ছিলেন। এ খবর পেয়ে অনিক তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আজ শুভ্রার বাসায় গিয়ে তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন শুভ্রা।
জানতে চাইলে মিরপুর বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান অনিক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি মারধর করেননি। তিনি বলেন, ‘কোনো সুস্থ ছেলে মেয়েদের মারধর করেন না।’ শুভ্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি আমার কলেজের ছোট বোন। আর ইডেন কলেজের ওই মেয়েটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম-উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইডেনের ওই ছাত্রীর বাসা খিলগাঁওয়ে। দুই দিন আগে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক ফুপাতো ভাই সন্ধান পান যে তিনি শুভ্রার বাসায় আছেন। পুলিশ আজ ওই বাসায় গিয়ে দেখে যে শুভ্রা, ওই ছাত্রী, আরেকটি মেয়ে ও একটি ছেলে বাসাটিতে আছেন। তখন পুলিশ শুভ্রার কাছে জানতে চান, ‘কেন ইডেনের ওই মেয়েকে আপনি আপনার কাছে রেখেছেন?’
ওসি আরও বলেন, এই চারজনকে পুলিশ দারুস সালাম থানায় নিয়ে যায়। ছাত্রীটির বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়। তাঁরা থানায় আসেন। মেয়েটির পরিবার কোনো মামলা করতে চায়নি। তখন মুচলেকা নিয়ে পুলিশ ওই ছাত্রীকে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেয়। মারধরের বিষয়ে শুভ্রা কোনো অভিযোগ করেনি বলে ওসি দাবি করেন।
মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শুভ্রা মাহমুদ সন্ধ্যায় বলেন, ‘বাম কানে আমি শুনতে পাচ্ছি না। ২০১৫ সালে অনিক আমার হাতে কোপ দিয়েছিলেন। মিরপুর থানায় আমি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছিলাম। পরে চাপ দিয়ে জিডিটি প্রত্যাহার করিয়ে নেয়।’
মিরপুর বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর ঘটনা ঘটলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আর ক্যাম্পাসে বাইরের ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
অনিক ছাত্রলীগের কাফরুল থানার নেত্রী ও মিরপুর বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা বৃষ্টির আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post