অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও সময় যত যাচ্ছে বিষয়টি ততই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সরকার বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও বেরিয়ে আসছে অন্তরালের মূল রহস্য। এ যেন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার মতো।
প্রধান বিচারপতি সিনহাকে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রমাণ করার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে করা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনটি। এটা প্রকাশের পর সারাদেশে বিতর্কের ঝড় আরো বেড়ে গেছে। এই আবেদনের সঙ্গে যে প্রধান বিচারপতির দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আজ প্রকাশ্যে বলেছেন ছুটির আবেদনটি প্রধান বিচারপতির হাতের লেখা নয়। এটা একটি ভুয়া আবেদন। প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। প্রধান বিচারপতির একটি স্বাক্ষর গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করার জন্যও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এরপর, বিএনপি ও দলটির আইনজীবীরা বিগত ৩ দিন ধরে দাবি করে আসছে যে প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার আত্মীয় স্বজনকেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপির এ অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আজ বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পাঠিয়েছেন পুজা করার জন্য। প্রধান বিচারপতি ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বাসায় ফেরার পরই সিনিয়র আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাস গুপ্ত গণমাধ্যমকে জানালেন, প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। এছাড়া প্রধান বিচারপতি যদি ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতেন তাহলে পুজা দিতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল না। আর সন্ধ্যার পর প্রধান বিচারপতির বাসা থেকে বেরিয়ে এসে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রিডার মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতিকে স্বাভাবিক দেখে আসছি। এ থেকে প্রমাণিত হয় প্রধান বিচারপতি আসলে সুস্থ আছেন।
এদিকে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা তিন দিন ধরে চেষ্টা করছেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট থেকে ফেরতও এসেছেন। সরকারের লোকজন তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ ঠিকই প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক করে আসছেন। এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অসুস্থ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী দেখা করতে পারলে অন্যান্য আইনজীবীরা পারবে না কেন? প্রধান বিচারপতি সুস্থ থাকার কারণেই সরকার আইনজীবীদের তার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না।
অপরদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আজ খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে আজ প্রধান বিচারপতি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সব গোমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে সরকার তড়িগড়ি করে প্রধান বিচারপতিকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান বিচাপতির সঙ্গে যদি সরকার কাউকে দেখা করতে না দেয় তাহলে বুঝতে হবে ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সরকার তাকে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে। তবে, এসব করে সরকার পার পাবে বলে মনে হচ্ছে না। একজন প্রধান বিচারপতিকে এভাবে হাইজ্যাক করে সরকার জঘন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। যার মাশুল সরকারকে বহুদিন ধরে দিতে হতে পারে।
Discussion about this post