অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ক্ষমতা বেশি না থাকলেও সম্মানের দিক থেকে তিনিই দেশের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি দেশের অভিভাবকও বটে। তাই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠন নিয়ে তার আপত্তিকর বক্তব্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। তবে, ধর্মীয় বিধি-বিধান বা ধর্মীয় অনুশাসনকে কটাক্ষ করে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের কিছু সংখ্যক কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা আল্লাহ, মুহাম্মদ (স.), কুরআন, হাদীস, নামাজ, রোজা, হজ, আযান, ইসলামি শিক্ষাসহ ধর্মীয় বিধানকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে আসছে।
দেশের আলেম-ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিবাদ জানালে তারা কিছু দিন চুপ থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া শুরু হয়। তবে, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবার ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে গেছে।
গত শুক্রবার বনানীতে পুজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বকে অবশ্যই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অশুভ শক্তি এখনো ধর্মভিত্তিক জাতি অথবা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় লিপ্ত যা আমরা লক্ষ্য করি। অতীতে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে জাতিতে জাতিতে বহু সংঘাত হয়েছে, যুদ্ধ হয়েছে। ধর্মের নামে মনুষ্যত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা ভুলুন্ঠিত হয়েছে। আমরা এখনো প্রত্যক্ষ করছি, একটি অশুভ মহল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর কয়েকশত বছরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হয়নি। আর পৃথিবীতে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠন শুধু নবী-রাসুলদের আমলেই হয়েছে। শেষ নবী মুহাম্মদ স. মদীনায় একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সোনালী দিন ছিল ওই সময়কালটা। ইতিহাসে যা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে যে খুন-হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নারীদের জীবন্ত কবর দেয়াসহ অপরাধে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা সমাজ। কুরআনের সমাজ তথা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সকল প্রকার খারাপ কাজের অবসান হয়েছিল। সকল প্রকার অযাচিত যুদ্ধ বিগ্রহের অবসান হয়েছিল। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বললেন, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের ফলে অতীতে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হয়েছে। ধর্মের নামে সহমর্মিতা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে।
তারপর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, এখনো একটি অশুভ শক্তি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মূলত মুহাম্মদ স. কেই অশুভ শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, পৃথিবীতে একমাত্র মুহাম্মদ স. ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি একজন মুসলমান এবং তিনি দেশের অভিভাবকও বটে। তার এমন বক্তব্যে সারাদেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ধর্মপ্রাণ ও ইসলাম প্রিয় জনতা রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন সংখ্যালঘু হিন্দুদের সন্তুষ্ট করতেই তিনি ইসলাম ধর্ম ও নবী সা. কে এমন কটাক্ষ করেছেন।
এদিকে, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে দেশের ইসলামী দলগুলো। ইতিমধ্যে জামায়তে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অসংখ্য ইসলামী দল রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছেন। তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যদি এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না দেন তাহলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না চাইলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে কয়েকটি ইসলামী সংগঠন।
Discussion about this post