অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন হত্যার চেষ্টা করেছিল মর্মে গত শনিবার ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর শুনশান নীরবতা নেমে এসেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। এই রিপোর্টি প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন বান্দরবান গিয়ে বললেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপর থেকে সরকার ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ ভারতীয় গণমাধ্যমের এ রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে, সুবীর ভৌমিক তার রিপোর্টের ওপর এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তার রিপোর্টকে শতভাগ সত্য বলে দাবি করছেন। তার রিপোর্টের পক্ষে ভারত সরকার বাংলাদেশকে বিস্তারিত তথ্যসম্বলিত একটি প্রতিবেদন দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এমনকি সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কাছে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা তারা প্রকাশ করতে পারছে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে অ্যানালাইসিস বিডি জানতে পেরেছে, ভারতীয় পত্রিকার এই রিপোর্টটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও এনিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কার্যত এঘটনায় আওয়ামী লীগে ভেতরে ভেতরে সিনিয়র নেতারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি হলো ওয়ান ইলেভেনের সময়ের সেই সংস্কারপন্থী হিসেবে তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু ও ওবায়দুল কাদেরের গ্রুপ আর অপরটি হলো শেখ হাসিনার পক্ষের গ্রুপ।
জানা গেছে, প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভারতীয় সাংবাদিকের এই রিপোর্টকে সংস্কারপন্থীদের নতুন ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন শেখ হাসিনার পক্ষের নেতারা। তারা বলছেন, তোফায়েল, আমু ও কাদেররা ওয়ান ইলেভেনের সময় দল থেকে শেখ হাসিনাকে মাইনাসের ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। এখন তারা গোপনে গোপনে আবারো সংগঠিত হচ্ছে। তারা পরিকল্পিতভাবেই ভারতীয় সাংবাদিককে দিয়ে এই রিপোর্ট করিয়েছে। তাদের টার্গেট এমনভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রধানমন্ত্রী আর দেশে না ফেরেন। আর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল সেদিন প্রকাশ্যে সমাবেশে বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দলের ভেতর থেকেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যদিও তিনি কারো নাম উল্লেখ করেন নি। দলের সাধারণ সম্পদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিকল্পনাতেই এসব কিছু হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
অপরদিকে, এ রিপোর্ট প্রকাশের পর আরও অনেক গুঞ্জনই শুনা যাচ্ছে। এমন কথাও শুনা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। এমনকি আপতত আর দেশে নাও ফিরতে পারেন।
সূত্রটির মতে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানেন তাকে হত্যার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রে তার দলের কিছু লোকও জড়িত আছে। আর ভারতের সঙ্গে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সম্পর্ক বর্তমানে চরম খারাপ যাচ্ছে। ভারতের গোয়েন্দারা কিছু একটা ঘটাতেও পারে। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বলেছে, নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ-ই যদি তাকে হত্যার চেষ্টা করে থাকে তাহলে দেশে আর কে তাকে নিরাপত্তা দেবে। পরিবারের সদস্যরাও চাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী আপতত দেশে আসুক।
অন্য আরেকটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেই জানতেন। পরিস্থিতির কারণে তিনি প্রকাশ করেন নি। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে তিনি কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। যদি প্রধানমন্ত্রী আর না আসেন এবং সংসদ ভেঙ্গে দিলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীরা বেশি বিপদের সম্মুখীন হতে পারে তাদের একটি তালিকাও তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়ে গেছেন। কোনো সময় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজন হলেও তাদেরকে যাতে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতার সংবাদ প্রকাশের পর এসব গুঞ্জন আরও ডালপাড়া ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ৫ অক্টোবরের পরই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। ওই তারিখে যদি প্রধানমন্ত্রী দেশে না ফেরেন তাহলে বুঝতে হবে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এজন্য আগামী মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
Discussion about this post